ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আকাশ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাত ঘণ্টাব্যাপী এই হামলায় প্রায় ৫৫০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী। এতে একজন নিহত ও অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে।
আক্রমণের কয়েক ঘণ্টা পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে “গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ” ফোনালাপ করেছেন। আলোচনা হয়েছে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদার, যৌথ অস্ত্র উৎপাদন এবং যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ নিয়ে।
বিভিন্ন জেলার ওপর এই হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো। রাতজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে শহর। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং জরুরি সেবাদানকারী যানবাহন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স আক্রমণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ছিল তিন শত টনেরও বেশি।
কিয়েভের বাসিন্দা ওয়েডিং ফটোগ্রাফার আলিয়া শাখলাই বলেন, “শুধু বাঁচার আশায় সবাই বেজমেন্টে নেমে গিয়েছিল। দশ মিনিট পরেই বিশাল বিস্ফোরণ হলো এবং আশ্রয়কেন্দ্রের বিদ্যুৎ চলে যায়।”
ইউক্রেন বলেছে, তারা এই হামলায় ২৭০টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। তবে ২০৮টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র রাডার থেকে হারিয়ে গেছে, যেগুলোর জ্যামিং হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিয়েভ ছাড়াও ডনিপ্রোপেট্রোভস্ক, সুমি, খারকিভ, চেরনিহিভসহ একাধিক অঞ্চলও আক্রান্ত হয়েছে।
একইদিন রাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ফোনালাপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্প বলেন, “আমি কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি। পুতিন যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী বলে মনে হয়নি।”
পুতিনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, “রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত পিছু হটবে না এবং সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর করবেই।”
এদিকে, জেলেনস্কি জানান, কিয়েভের সাম্প্রতিক এই আক্রমণ শুধুমাত্র অব্যাহত সন্ত্রাসই নয়, এটি একটি পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাকে আরও জোরদার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা জরুরি।
জুলাই মাসে রাশিয়া নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে ৫ হাজার ৪৩৮টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি ৩৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮০টির মতো ছিল ব্যালিস্টিক মিসাইল।
সাম্প্রতিক আলোচনায় জেলেনস্কি ও ট্রাম্প যৌথভাবে ড্রোন প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে তাদের দলগুলোর মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। তবে কিছু বন্দি ও মৃতদেহ বিনিময়ের মতো মানবিক পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়েছে। শুক্রবার আরও এক বন্দি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে, যদিও উভয় পক্ষই এতে জড়িত সেনাদের সংখ্যা জানায়নি। ইউক্রেন জানিয়েছে, বেশিরভাগ সেনা ২০২২ সাল থেকে বন্দি ছিলেন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় রাশিয়ার হেফাজতে ছিলেন।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিদেঙ্কো বলেন, “রাতভর পরিবারগুলো মেট্রো স্টেশনে, বেজমেন্টে, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে ছুটে গেছে। রাজধানীর বুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এটি স্পষ্টত একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা।”
এটি এখনো স্পষ্ট নয়, রাশিয়ার এই পরিকল্পনার পরিণতি কী হতে চলেছে, তবে ইউক্রেন বলছে, দেশটির জবাবও হবে দৃঢ় এবং সংগঠিত।