আগামী সপ্তাহে রিও ডি জেনেইরোতে বসছে ব্রিকসের বার্ষিক সম্মেলন। তবে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ও ইরানে হামলার মতো জটিল ইস্যুগুলোর বিরুদ্ধে দলীয় অবস্থান না নেওয়ায় ব্রিকসের কার্যকারিতা ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
২০০৯ সালে গঠিত এই জোটের উদ্দেশ্য ছিল বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক শাসন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সদস্যদের ভিন্নমত, দ্বন্দ্ব এবং স্বার্থের সংঘাত জোটটিকে দুর্বল করে তুলেছে।
এ বছরের সম্মেলনেও সেই দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুজনই সভায় উপস্থিত থাকছেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য হওয়ায় ব্রাজিল বাধ্য হতো পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে, যা এড়াতে তিনি অনলাইনে যুক্ত হবেন। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি চীনকে উদ্বিগ্ন করেছে, ফলে শি জিনপিংয়ের পরিবর্তে চীনের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
বিশ্লেষক প্রিয়াল সিং জানান, “এই সম্মেলন কেবল ব্রিকসের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবে, বড় কোনো ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কিংবা ঘোষণা আসবে না।”
এদিকে গাজা ইস্যুতে ব্রিকসের ভূমিকা ছিল মূলত প্রতিক্রিয়াশীল। দক্ষিণ আফ্রিকা গনহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলেও ব্রাজিল ও মিশর ছাড়া আর কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায়নি। বিপরীতে ভারত ইসরায়েলের অন্যতম সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ভারত গাজায় ড্রোন, এআই প্রযুক্তি ও নির্মাণ শ্রমিক পাঠিয়েছে এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। এই ভূমিকা পশ্চিমা বিশ্বকে ব্রিকসকে প্রতিপক্ষ না করে সম্ভাব্য সহযোগী হিসেবে ভাবতে বাধ্য করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক সারাং শিদোর।
তবে জোহানেসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাট্রিক বন্ড বলেন, “ইরান ছাড়া ব্রিকসের সব সদস্যই কোনো না কোনোভাবে ইসরায়েলের সামরিক-অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে উপকৃত হচ্ছে।”
তিনি জানান, চীন ও ভারতের কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি বন্দর পরিচালনায় জড়িত এবং চীনা ড্রোন নির্মাতা ডিজেআই এখনো ইসরায়েলকে ড্রোন সরবরাহ করছে।
তবে এতসব সীমাবদ্ধতার মাঝেও ব্রিকস এখনো গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর জন্য একটি প্রতীকী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকে রয়েছে।
সিং বলেন, “ব্রিকসের মূল পাঁচটি দেশের জন্য এই জোট কেবল কৌশলগত নয়, তাদের বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। যদিও মতভেদ রয়েছে, তবুও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা এবং বিকল্প আন্তর্জাতিক কাঠামোর ধারণা এগিয়ে নিতে ব্রিকসের উপস্থিতি প্রয়োজনীয়।”
যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ভিন্নমত, ভাঙা ঐক্য এবং নেতৃত্বহীনতা ব্রিকসকে দুর্বল করে তুলছে, তারপরও ব্রিকস তার প্রতীকী শক্তি ধরে রাখবে এবং একটি বিকল্প গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অন্তত টিকে থাকবে।