চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এবং লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতিতে বাংলাদেশে দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে খাদ্য সংকট। এই সংকটের ফলে দেশের কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ফুড সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক (খানি)।
পবিত্র ঈদুল আজহার পর থেকেই দেশের বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। পরিকল্পনা কমিশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির প্রায় ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল এই চালের মূল্যবৃদ্ধি। অথচ তখনই দেশে বোরো মৌসুমে যথেষ্ট চাল উৎপাদিত হয়েছিল, যা বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কোনো কারণ ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল।
এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে খানি নেটওয়ার্ক ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। “ভাতের পাতের স্বস্তি ফেরাও” স্লোগানে আয়োজিত কর্মসূচিতে কৃষক, রিকশাচালক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
ময়মনসিংহে এক মানববন্ধনে কৃষক জোহার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কম দামে মহাজনদের কাছে ধান বিক্রি করি, পরে আবার বেশি দামে চাল কিনে খাই। আমাদের অধিকার কে দেখবে?” রিকশাচালক সিকান্দার বলেন, “আমার আয়ের অর্ধেক চলে যায় চাল কিনতে। আমরা চাই চাল ৪০ টাকায় কিনতে পারি।”
নোয়াখালীর কর্মসূচিতে খানি নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, “মানুষ এখন শুধুমাত্র চাল খেয়ে বেঁচে আছে। সবজি, মাছ, মাংস খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধদের পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে।”
খানির বরাতে জাতিসংঘের এক তথ্যে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ৩০ শতাংশ মানুষ ন্যূনতম পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে সক্ষম নয়। নিম্ন আয়ের পরিবারের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত।
এই পরিস্থিতিতে খানির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা জরুরি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে—
১. কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সরকারি ক্রয় বৃদ্ধি করতে হবে।
২. দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য দেশব্যাপী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র কৃষকদের ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ ও বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. টিসিবি ও ওএমএস কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়াতে হবে।
৫. বাজারে কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেট রোধে নজরদারি জোরদার করতে হবে।
বরিশালে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, “ধানের দামের অস্থিরতা, মিলিং খরচ বৃদ্ধি, মজুতদারির অনিয়ম এবং দুর্বল নজরদারির কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। খাদ্য ব্যয়ের চাপ কমানো না গেলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা যাবে না।”
খানি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়বে এবং এর ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান— দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।