যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার এক রায়ে দক্ষিণ সুদানে অভিবাসী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে যাদের বিতাড়ন করা হচ্ছে তাদের সঙ্গে দেশটির কোনো আত্মীয়তা বা পরিচয় নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই সিদ্ধান্ত আসে আদালতের রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে, যারা জানিয়েছেন যে অভিবাসন কর্মকর্তারা দ্রুত অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে পারেন। এই রায়ের ফলে সেই আদেশ বাতিল হয়ে যায়, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা অন্য দেশে পাঠানো হলে সেটি চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পেতেন।
গত মে মাসে যাদের দক্ষিণ সুদানে পাঠানোর কথা ছিল, তাদের বহনকারী একটি বিমান ডাইভার্ট হয়ে জিবুতির একটি নৌঘাঁটিতে অবস্থান করছিল। সেখানে আটক ব্যক্তিদের একটি কনটেইনারে রাখা হয়। এই রায়ের ফলে এখন সেই ফ্লাইট সম্পন্ন করা যাবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দপ্তরের সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, গত ২৩ জুন দেওয়া রায়ে বিচারপতি ব্রায়ান মারফির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি স্থগিত হয়ে গেছে এবং দক্ষিণ সুদান ফ্লাইট সংক্রান্ত তার নির্দেশও কার্যকর নয়।
সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি, যা জরুরি শুনানির ক্ষেত্রে সাধারণ ঘটনা। তবে দুইজন উদারপন্থী বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র ও কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন রায়ের বিরোধিতা করেছেন।
বিচারপতি সোটোমায়র বলেন, “সরকার যেন বিশেষ সুবিধা পায় এমন ব্যবস্থা চলছে। অন্যরা নিয়ম মানে, অথচ প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টকে এক কলেই ডেকে নেয়।”
মানবাধিকার সংস্থা ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন লিটিগেশন অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ট্রিনা রেলমুটো বলেছেন, “এই অভিবাসীরা দক্ষিণ সুদানে গেলে কারাবন্দি, নির্যাতন বা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।”
সুদানে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানে আরেকটি গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শুরু হওয়া অভিবাসন দমন নীতির ধারাবাহিকতায় এই বিতাড়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক দপ্তর জানিয়েছে, বিতাড়নের জন্য নির্বাচিত আটজন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ছিল।
বিচারপতি মারফি, যিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনোনীত, বলেছিলেন যে তৃতীয় কোনো দেশে অভিবাসী পাঠানো সম্ভব হলেও সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ থাকা উচিত। তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তারা অভিবাসীদের কথা শোনার সুযোগ না দিয়ে আদেশ লঙ্ঘন করেছে।
জিবুতির নৌঘাঁটিতে আটকদের জন্য পরিবেশ ছিল কঠিন। সেখানে তাদের গার্ডসহ কনটেইনারে রাখা হয়েছিল। রেলমুটো বলেন, “তারা আতঙ্কে রয়েছে যে তাদের দক্ষিণ সুদানে পাঠানো হবে।”
তবে ম্যাকলাফলিন এই রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আইনের শাসন, নিরাপত্তা ও নাগরিক সুরক্ষার বিজয়’ বলে অভিহিত করেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশকে সম্মত করেছে, যেখানে অভিবাসীদের সাময়িকভাবে পাঠানো যায়। তবে দক্ষিণ সুদানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অভিবাসী পাঠানোর সিদ্ধান্তকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে।