প্রায় দুই দশক পর একসঙ্গে জনসম্মুখে মঞ্চ ভাগ করলেন মহারাষ্ট্রের দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও চাচাতো ভাই উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ ঠাকরে। শনিবার মুম্বাইয়ের ওর্লির ন্যাশনাল স্পোর্টস ক্লাব অব ইন্ডিয়া (NSCI) ডোমে আয়োজিত এক সমাবেশে তারা হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার সরকারি আদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান এবং মারাঠি ভাষা ও পরিচয়ের পক্ষে একসঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুধু ভাষাগত অধিকার নয়, মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক জোটের হিসাব-নিকাশেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (UBT) ও রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (MNS) যদি স্থানীয় নির্বাচনে একত্রে লড়াই করে, তাহলে রাজ্যে ভোটের ভারসাম্যে বড় প্রভাব পড়তে পারে।
একসঙ্গে ফিরে আসার সময়
শনিবার দুপুর নাগাদ ৮,০০০ আসনের NSCI ডোমে দুই ঠাকরে ভাই প্রবেশ করলে উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। বাইরে স্থাপিত জায়ান্ট স্ক্রিনে আরও ৫,০০০ সমর্থক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। ভাষাগত বৈষম্য, জাতপাত ও ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে একযোগে সরকারকে আক্রমণ করেন তারা।
রাজ ঠাকরে, যিনি ২০০৫ সালে শিবসেনা ভেঙে MNS গঠন করেন, বিদ্রূপ করে বলেন, ‘‘বাল ঠাকরে যা পারেননি, তা করে দেখিয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র রাজনীতি বা লড়াইয়ের চেয়ে অনেক বড়। আজ ২০ বছর পর আমি আর উদ্ধব একত্রিত হয়েছি।’’
জোটের ইঙ্গিত দিলেন উদ্ধব
উদ্ধব ঠাকরে নিজের বক্তব্যে বলেন, ‘‘আমরা একত্রিত হয়েছি এবং একসঙ্গেই থাকব।’’
তিনি বিজেপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘ওরা রাজনীতিতে বাণিজ্য করে। যখন প্রয়োজন ফুরায়, তখন ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এই ভাষার ইস্যুতে আমাদের এক হওয়া লোক দেখানো নয়।’’
সরকারকে তীব্র সমালোচনা রাজের
রাজ ঠাকরে অভিযোগ করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে মহারাষ্ট্র সরকার পরীক্ষামূলকভাবে মুম্বাইকে রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। তিনি বলেন, ‘‘কোনও প্রতিক্রিয়া না পেলে তারা আলাদা করেই ফেলত। কিন্তু প্রবল প্রতিবাদের মুখে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।’’
তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, মারাঠি ভাষা প্রচারের নামে সহিংসতা না চালাতে। সেই সঙ্গে বলেন, কেউ যদি নাটক করে, তাকে মারলেও যেন ভিডিও না করা হয়।
MNS ও শিবসেনা জোটের সম্ভাবনা
যদিও রাজ ঠাকরে প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দেননি, তবে মারাঠি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেমন্ত দেশাই বলেন, ‘‘যদি দুই ঠাকরে একসঙ্গে ভোটে লড়েন, তাহলে মারাঠি ভোটের বড় অংশ একদিকে ঝুঁকতে পারে। এতে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা চাপে পড়বে।’’
উল্লেখ্য, MNS এখন পর্যন্ত রাজ্যের নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পায়নি। ২০১৭ সালের BMC নির্বাচনে ৭টি ওয়ার্ড জিতলেও, ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একটি আসনও জিততে পারেনি।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া ও কংগ্রেসের অনুপস্থিতি
সমাবেশের পর এনসিপি (SP) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘এই বিজয় শোভাযাত্রা আমাদের মারাঠি ভাষা ও মাটির সম্মান রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে।’’
অন্যদিকে, কংগ্রেস সমাবেশে সরাসরি অংশ নেয়নি। যদিও তারা হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঠাকরে ভাইদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল, তবে দলীয়ভাবে সমাবেশে কেউ অংশ নেয়নি। কেবলমাত্র প্রাক্তন সাংসদ ড. ভলচন্দ্র মুঙ্গেকর ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত ছিলেন।
২০ বছর পর উদ্ধব ও রাজ ঠাকরের এক মঞ্চে আসা শুধু আবেগ নয়, বরং মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে একটি সম্ভাব্য জোটের সূচনা। ভাষার প্রশ্নে এক হওয়া দুই দলের ভবিষ্যৎ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।