মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার সিরিয়ার ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে। একই সময়ে ইসরায়েল সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্প গত মে মাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রাথমিক ঘোষণা দেন। সৌদি আরব ও তুরস্কের অনুরোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে দেশটির নতুন নেতা, সাবেক ইসলামপন্থী গেরিলা আহমেদ আল-শারাআ, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে শাসন করে আসা আসাদ পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন।
২০০৪ সাল থেকে কার্যকর জাতীয় জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশটি বাতিল করে ট্রাম্প বলেন, “এই সিদ্ধান্ত একটি স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য প্রস্তুত সিরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার অংশ।”
পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও জানান, সিরিয়াকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র হিসেবে তালিকাভুক্ত রাখা নিয়ে পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু হবে। একইসঙ্গে শারাআ এবং তার নেতৃত্বাধীন ‘হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)’-কে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টিও পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে।
ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিরিয়া প্রথমবারের মতো ২০১১ সালের যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি ইলেকট্রনিক লেনদেন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার সরকারের কিছু উপাদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক।” তিনি আরও বলেন, “এই রায় উদ্বাস্তুদের সম্মানজনকভাবে দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত করবে।”
সিরিয়ায় আসাদ পতনের পরও ইসরায়েল বিভিন্ন সামরিক অবস্থানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। নতুন নেতৃত্বের প্রতি সন্দেহ থাকলেও এখন তারা সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এর সম্প্রসারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস হামলার পর থেকে ইরানের প্রভাব কমে যাওয়ায় অঞ্চলটিতে নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দেশটিকে আঞ্চলিকভাবে যুক্ত করার পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের তুরস্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক বলেন, “এই মুহূর্তটি অভূতপূর্ব। প্রেসিডেন্ট এমন একটি দল গঠন করেছেন যারা এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারবে।”
তবে সিরিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা এখনও থামেনি। গত ২২ জুন দামাস্কাসে গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় হামলায় ২৫ জন নিহত হন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অনেককে চমকে দিয়েছে। কারণ, এতদিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না। এখন দেখার বিষয়, এই নীতি পরিবর্তনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা কেমন রূপ নেয়।