বয়োজ্যেষ্ঠ নারী তেরেজার চোখে ভবিষ্যতের ব্রাজিলের এক অন্য রকম চিত্র তুলে ধরেছেন পরিচালক গ্যাব্রিয়েল মাসকারো তার নতুন সিনেমা দ্য ব্লু ট্রেইল-এ। সিনেমাটি এ বছরের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার বেয়ার গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার জিতে নেয় এবং বর্তমানে কার্লোভি ভ্যারির ৫৯তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে।
একটি কাছাকাছি ভবিষ্যতের ব্রাজিলে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃদ্ধদের সরকার পরিচালিত উপনিবেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু ৭৭ বছর বয়সী তেরেজা সে নিয়ম মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং স্বাধীনতার খোঁজে পালিয়ে যান। এই পালিয়ে যাওয়ার ভেতর দিয়েই শুরু হয় এক হৃদয়স্পর্শী যাত্রা।
তেরেজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেনিস ওয়েইনবার্গ। তার সঙ্গে আছেন মিরিয়াম সোকারাস ও রদ্রিগো সান্তোরো। সিনেমাটি কেবল একটি বৃদ্ধার বিদ্রোহ নয়, বরং বয়স, স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা এবং সামাজিক ব্যর্থতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে।
পরিচালক মাসকারো জানিয়েছেন, সিনেমাটি এমন একটি সমাজ নিয়ে যেখানে উৎপাদনশীলতার যুক্তিতে বৃদ্ধদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তিনি শুধু ভবিষ্যতের গল্প বলেননি, বরং আজকের সমাজের কথাই একটু ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন।
সিনেমার রাষ্ট্র ব্যবস্থাটি এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যেখানে বৃদ্ধদের জন্য মিষ্টি কথায় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের তুলে নেওয়ার জন্য ‘সিটিজেন পুলিশ’ নামক একটি যান রয়েছে, যেটিকে সাধারণ মানুষ রসিকতা করে বলে ‘রিঙ্কল ওয়াগন’। এটি যেমন হাস্যকর, তেমনি ভয়ঙ্কর।
সিনেমার আরেকটি আকর্ষণ হলো ম্যাজিক রিয়ালিজম, বিশেষ করে নীল রঙের স্লাইম ছাড়ে এমন এক জাদুকরী শামুক, যা ভবিষ্যৎ দেখতে ও পথ খুলে দিতে সক্ষম। এই শামুক যেন সময়ের ধীরগতির প্রতীক হলেও, সম্ভাবনার অসীমতা প্রকাশ করে।
দ্য ব্লু ট্রেইল শুধুমাত্র বয়সের গল্প নয়। এটি গৃহহীনতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিপীড়ন এবং আধুনিক উপনিবেশবাদের প্রতি এক ধরনের প্রতিক্রিয়াও বটে।
পরিচালক জানিয়েছেন, তার দাদী ৮০ বছর বয়সে আঁকা শেখেন। এ ধরনের ঘটনা তার চিন্তার জগৎ পাল্টে দেয়। তাই তিনি চেয়েছেন এমন একটি সিনেমা বানাতে, যেখানে বৃদ্ধাও হতে পারেন নায়িকা, যিনি নতুন অর্থ খোঁজেন জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও।