স্পেনের ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক দল এক ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। যৌনকর্মী এবং দুর্নীতির অভিযোগে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর দলীয় কাঠামোয় বড় পরিবর্তন এনেছে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের দল।
শনিবার এক ঘোষণায় দলটি জানায়, এখন থেকে কোনো সদস্য অর্থের বিনিময়ে যৌন কার্যক্রমে অংশ নিলে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেন, “যদি আমরা বিশ্বাস করি একজন নারীর দেহ বিক্রয়ের বস্তু নয়, তবে আমাদের দল এমন কিছু কখনো সহ্য করতে পারে না।”
৫৩ বছর বয়সী সানচেজ বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে আমাদের সবার জন্য কঠিন সময়। আমি যাদের বিশ্বাস করেছিলাম, তারা আজ সন্দেহের কেন্দ্রে। এজন্য আমি দুঃখিত।” তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “ঝড় শুরু হলে ক্যাপ্টেন পালিয়ে যায় না, বরং নৌকাকে দিক দেখায়।”
এই ঘটনায় দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সান্তোস সারদানকে, যিনি সম্প্রতি যৌনকর্মী ভাড়া ও ঘুষ গ্রহণে অভিযুক্ত হয়ে আটক হয়েছেন। তার স্থলে দায়িত্ব পেয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী আইনজীবী রেবেকা তোররো।
দলের ভিতরে আরও একটি ধাক্কা আসে, যখন ফ্রান্সিসকো সালাজার নামে আরেক ঘনিষ্ঠ নেতা, যিনি নেতৃত্বে নতুন পদে আসার কথা ছিল, অভিযোগ ওঠার পর পদত্যাগ করেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম eldiario.es জানায়, দলের একাধিক নারী কর্মী সালাজারের বিরুদ্ধে অনুপযুক্ত আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
একই সঙ্গে এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হয়েছেন স্পেনের সাবেক পরিবহন মন্ত্রী হোসে লুইস আভালোস। তার বিরুদ্ধে সরকারি চুক্তিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
এই সংকটকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল পিপলস পার্টি (PP) নিজেদের জোরালো বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে। দলটির নেতা আলবার্তো নুনিয়েজ ফেইহো বলেন, “স্পেনবাসী এমন একটি সরকার চায় না, যারা তাদের ঠকায়। তারা এমন সরকার চায় যারা সেবা দেয়, চুরি করে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরাই এই বিশৃঙ্খলতার একমাত্র বিকল্প। স্পেনের বিভাজন আর রাজনৈতিক ক্লান্তির প্রেক্ষাপটে পিপলস পার্টিই সমাধান।”
তবে সবকিছুর পরেও প্রধানমন্ত্রী সানচেজ পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কেলেঙ্কারি স্পেনের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।