গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি দখল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে তিনি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও প্রত্যাখ্যান করেছেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার জেরুজালেমে নিজের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, “গাজায় এখনও অন্তত ২০ জন ইসরায়েলি বন্দি জীবিত রয়েছে এবং আরও প্রায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, শুধু বন্দিমুক্তির প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধবিরতি বিবেচনায় আনা হতে পারে। তবে সেটি হবে কেবলই ‘অস্থায়ী বিরতি’।
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে এখনও অন্তত ১০ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে। তাদের অনেকে নির্যাতন, খাদ্য সংকট ও চিকিৎসা অবহেলার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
হামাস বারবার জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ বন্ধ করে, সেনা সরিয়ে নেয় এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়, তবে তারা ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময় করতে প্রস্তুত। তবে নেতানিয়াহু এই শর্ত পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হামাসকে উৎখাত, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ এবং পুরো ভূখণ্ড পুনর্দখল করা।”
আরও পড়ুন:
- ইসরায়েলি হামলায় একদিনে গাজায় নিহত ৯৩, মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৫৩ হাজার
- ইসরাইলের যুদ্ধনীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনায় ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা
নেতানিয়াহুর এই অবস্থান নিয়ে দেশটির ভেতরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সংহত করতেই তিনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।
বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, “নেতানিয়াহুর বক্তব্যের মানে হলো গাজা বছরের পর বছর দখলে থাকবে।” তিনি অভিযোগ করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলে নেতানিয়াহু মিথ্যা বলছেন।”
ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা ইয়াইর গোলান বলেন, “আমি একজন ভীত, দায়িত্ব এড়ানো এবং মিথ্যাবাদী নেতাকে দেখেছি।” তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার ঘোষণা দেন এবং বলেন, “নতুন নির্বাচনে আমরা তাকে হারাবই।”
এছাড়া গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারের একটি ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্দিমুক্তির সুযোগ হারাতে যাচ্ছি। ১৯ মাস পার হলেও যুদ্ধের শেষ নেই, গাজা পুনর্গঠনের সম্ভাবনাও নেই।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৫৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক মহল এ পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে রাজনৈতিক সমাধানের পথ এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে।