বরগুনার বেতাগী উপজেলার খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে বর্ষা এলেই জমে ওঠে বাঁশের তৈরি চাঁই, বুচনা ও চরগড়ার বাজার। বর্ষার এই প্রজনন মৌসুমে যখন মাছের ডিম ছাড়ার সময়, তখনই চায়না জাল ও নানা নিষিদ্ধ জালে অবাধে ধরা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মা ও পোনা মাছ।
পৌরসভার সাপ্তাহিক হাটে ঘুরে দেখা যায়, আশপাশের ইউনিয়ন থেকে আসা বিক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে ভিড় করছেন। বিশেষ করে চায়না জাল ও চাঁই-এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অথচ এই জালেই আটকা পড়ে বিলুপ্তির পথে থাকা অনেক মূল্যবান দেশীয় মাছ।
উপজেলার বিবিচিনি, সদর, মোকামিয়া, বাসন্ডা, হোসনাবাদ, জলিসা, চরখালীসহ প্রায় সব ইউনিয়নে খাল ও বিলজুড়ে এখন ৩ শতাধিক নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে চলছে মাছ শিকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব জালে আটকা পড়ে দেশীয় মাছ যেমন বোয়াল, পাবদা, শোল, গুইল্লা, বাইলা, পুঁটি, চিংড়ি, টাকি ইত্যাদি প্রজননের সুযোগ না পেয়েই মারা যাচ্ছে।
মোকামিয়া গ্রামের বাসিন্দা রতন হাওলাদার বলেন, “চায়না জাল পানিতে পাতলেই মাছ ধরা পড়ে। এই জাল একবার ফেললেই সব ধরনের মাছ আটকা পড়ে।”
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য গবেষক ড. লোকমান হোসেন বলেন, “প্রজননের সময় মা মাছ ধরা পড়লে পরবর্তী প্রজন্মের মাছ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে দেশীয় মাছ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তুরান জানান, “চায়না জাল, কারেন্ট জাল ও চাঁই জাতীয় উপকরণ দিয়ে পোনা মাছ ধরা আইনত নিষিদ্ধ। এসব বন্ধে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ইউএনও মো. বশির গাজী বলেন, “ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। কোনোভাবেই অবৈধ মাছ ধরা চলতে দেওয়া হবে না।”
উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে যত্রতত্র নিষিদ্ধ জাল পাতায় শুধু মাছের প্রজনন নয়, পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে কৃষি উৎপাদনেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষক ও পরিবেশ সচেতনরা এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন।