বিশ্বপ্রসিদ্ধ সারপেন্টাইন প্যাভিলিয়নের ২০২৫ সংস্করণের স্থপতি হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশের মারিনা তাবাসসুম। তিনিই প্রথম দক্ষিণ এশীয় স্থপতি যিনি এই গ্রীষ্মকালীন স্থায়ী কাঠামোর নকশা করেছেন। লন্ডনের কেনসিংটন গার্ডেনে অবস্থিত এই স্থাপনাটির নাম রাখা হয়েছে “অ্যা ক্যাপসুল ইন টাইম”।
এই অনন্য প্যাভিলিয়নটি তাঁর প্রতিষ্ঠান, মারিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টসের (MTA) সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে। কাঠামোটি চারটি বাঁকানো কাঠের খাঁচা দিয়ে তৈরি, যা মিলে একটি আধা খোলা প্রাঙ্গণ গঠন করেছে। কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি গিংকো গাছ, যা স্থায়িত্ব ও স্মৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
মারিনা তাবাসসুম বলেন, “এই কাঠামোটা খুবই আদি ধরনের, কিন্তু আমরা এতে এমন কাট দিয়েছি, যা পার্ক এবং আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেছে। একধরনের সীমারেখা মুছে দেওয়ার ভাবনা ছিল। আলো আমার নকশার একটি প্রধান উপাদান।”
প্যাভিলিয়নটির নকশায় দক্ষিণ এশীয় উৎসবের ছাউনি বা শামিয়ানার প্রভাব স্পষ্ট। কাঠের ফ্রেমের মাঝে ব্যবহৃত হয়েছে স্টিলের কাঠামোতে স্বচ্ছ পলিকার্বনেট প্যানেল। এই প্যানেলগুলো পরিবেশের আলো এবং রঙ অনুযায়ী নানা রূপে আলোর প্রতিফলন ঘটায়।
অবশ্য প্যাভিলিয়নটি সাময়িক। এটি আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে স্থপতির দৃষ্টিতে এর ভবিষ্যৎ ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এটি ভবিষ্যতে কোনো পাবলিক লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত হবে।
মারিনা বলেন, “বিশ্বজুড়ে বই নিষিদ্ধ করা এবং জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার সময়ে এটি জ্ঞানচর্চার জন্য এক উপযুক্ত স্থান হতে পারে।”
তিনি আরও জানান, কাঠামোটি এক সময় ভেঙে ফেলা হলেও গিংকো গাছটি পার্কেই রয়ে যাবে। ভবিষ্যতে সেখানে গিয়ে গাছটি দেখে তিনি প্যাভিলিয়নের স্মৃতি খুঁজে পাবেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য পরিবহনযোগ্য, প্লাবন-প্রতিরোধী বাড়ির নকশা করে প্রশংসিত হয়েছিলেন মারিনা তাবাসসুম। সেই ধারাবাহিকতায় “অ্যা ক্যাপসুল ইন টাইম” স্থায়িত্ব, স্থানিকতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের এক অনন্য উদাহরণ।
তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশের উপক্রান্তীয় আবহাওয়ায় কেবল মাথার ওপর ছাউনি থাকলেই চলে। ভেতরের আর বাইরের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।” সেই দর্শনই এবার লন্ডনের একটি পার্কে খোলা আকাশের নিচে এক নতুন আশ্রয় খুঁজে পেল।