Monday, July 7, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কাতারে যাচ্ছে ইসরায়েল, হামাসের শর্ত মেনে নিতে নারাজ নেতানিয়াহু

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কাতারে যাচ্ছে ইসরায়েল, হামাসের শর্ত মেনে নিতে নারাজ নেতানিয়াহু

হামাস বলছে তারা আলোচনায় প্রস্তুত, তবু যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত চুক্তির খসড়ায় দ্বিমত অব্যাহত

গাজা উপত্যকায় ২১ মাস ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের নিরসনে নতুন আলোচনার সুযোগ তৈরি হলেও, পারস্পরিক মতভেদ কাটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনও অনিশ্চিত। হামাসের আলোচনার আগ্রহ প্রকাশের পর ইসরায়েল কাতারে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। তবে হামাসের শর্তগুলো ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

শনিবার ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৪২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। একইদিনে নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “হামাসের পক্ষ থেকে যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে তা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।”

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভিত্তিতে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং কাতারে ঘনিষ্ঠ আলোচনায় অংশ নিতে।

হামাস তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শর্তের বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। তবে দুজন ফিলিস্তিনি সূত্র এএফপিকে জানান, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং কয়েকটি মরদেহ ফেরত দেওয়া হতে পারে, বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

তারা আরও জানান, হামাস চায় যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে পুনরায় ত্রাণ বিতরণ চালুর নিশ্চয়তা।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে বলেন, “এটা ভালো যে তারা সাড়া দিচ্ছে, তবে আমাকে এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। গাজা পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান দরকার।”

যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক হামলার মাধ্যমে। তখন থেকে ইসরায়েল ব্যাপক পাল্টা অভিযান শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল হামাস ধ্বংস এবং সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা।

এ পর্যন্ত দুটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছে, যা কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়। বর্তমানে ৪৯ জন জিম্মি গাজায় অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনকে মৃত বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলআত্তি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

ইসরায়েলে সাপ্তাহিক জিম্মি মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভে গালি ও জিভ বর্মানের ফুফু ম্যাকাবিত মায়ার বলেন, “আমরা এমন একটি সমাধান চাই, যা সবার জীবন বাঁচাবে।”

গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসের বাসিন্দা কারিমা আল-রাস বলেন, “হামাস ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শুনে আমরা খুশি। আমরা চাই যুদ্ধবিরতি হোক, যাতে আরও ত্রাণ প্রবেশ করতে পারে। লোকজন এখন আটা পাওয়ার জন্য মরছে।”

মে মাসের শেষদিকে ইসরায়েলের আংশিক অবরোধ শিথিলের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) খাদ্য বিতরণের দায়িত্ব নেয়। তবে শনিবার খান ইউনিসে এই সংস্থার দুটি মার্কিন কর্মী “টার্গেটেড সন্ত্রাসী হামলায়” আহত হন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা আহতদের উদ্ধার করেছে। তবে জাতিসংঘসহ প্রধান ত্রাণ সংস্থাগুলো GHF-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণ এটি ইসরায়েলি সামরিক উদ্দেশ্যে গঠিত বলে তারা মনে করে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র জানান, খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ৫০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

সবশেষে, এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ১,২১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এর জবাবে ইসরায়েলের অভিযানে প্রাণ গেছে অন্তত ৫৭,৩৩৮ জনের, যাদের মধ্যেও বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

RELATED NEWS

Latest News