ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-র সঙ্গে সকল ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করেছে ইরান। বুধবার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
গত ২৫ জুন ইরানের পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব পাশ হয়। পরদিন থেকেই আইনটি কার্যকর বলে ঘোষণা দেয় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। নতুন আইনের মাধ্যমে ইরান দাবি করেছে, এটি পারমাণবিক অস্ত্র না ছড়ানোর আন্তর্জাতিক চুক্তি (এনপিটি)-তে দেশের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে অভিহিত করেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “এই মুহূর্তে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে ফিরে আসার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইরানের এই পদক্ষেপ গভীরভাবে হতাশাজনক।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রও একে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ইসরায়েলি হামলায় পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি
গত মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের ফোর্দো, ইসফাহান ও নাটাঞ্জে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ চালায়। এতে ৯০০ জনের বেশি নিহত হন বলে জানিয়েছে ইরানের বিচার বিভাগ। ইরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৮ জন নিহত হয়।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল জানান, এসব হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
পরিদর্শকদের কার্যক্রম স্থগিত
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি জানিয়েছেন, আইএইএ পরিদর্শকরা ইরানে অবস্থান করলেও তাদের কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে এবং তাদেরকে কোনো স্থাপনায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
পার্লামেন্ট সদস্যদের মতে, এখন থেকে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের আগে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে। আইএইএ-র ক্যামেরাগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ইরানি সংবাদমাধ্যম।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও চাপ
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আর ইউরোপীয় দেশগুলোকে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির “স্ন্যাপব্যাক” ব্যবস্থা সক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছেন, যা জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের পথ খুলে দেবে।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্টিন গিয়েসে বলেছেন, ইরানের এই সিদ্ধান্ত একটি ‘বিপর্যয়কর বার্তা’ দিচ্ছে।
ইরান অভিযোগ করেছে, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ‘প্রতারণামূলক রিপোর্ট’ ও ‘চক্রান্তের ভূমিকা’ পালন করেছেন। ফলে তার বোমা হামলাস্থলে পরিদর্শন চাওয়াকে ‘অশুভ উদ্দেশ্যপ্রসূত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান।
ভবিষ্যৎ শঙ্কা
নতুন আইন অনুসারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম এখন বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়াবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে বোমা দিয়ে ধ্বংস করা যায় না। আমরা ক্ষতির শিকার হয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের জ্ঞান ও সক্ষমতা অক্ষত রয়েছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অবস্থান থেকে সরে না এলে ইরানকে বহির্বিশ্বের কঠিন চাপে পড়তে হতে পারে।