হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন অভিবাসন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারির প্রেক্ষিতে এই পরামর্শ প্রদান করা হয়।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক কার্যালয় ও আইন বিভাগের ইমিগ্রেশন সহায়তা টিম এক ভার্চুয়াল আলোচনায় শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে অবগত করে। আলোচনায় অংশ নেন হার্ভার্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের পরিচালক মোরিন মার্টিন এবং আইন স্কুলের ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি জেসন কোরাল।
তারা জানান, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীদের ভিসা যাচাইয়ের সময় তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যালোচনা করতে পারে। একইসাথে কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত ডিভাইস স্ক্যান করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঠিক কারা এসব মূল্যায়ন করে তা পরিষ্কার নয়, তবে এটি হয়তো ফেডারেল কর্মচারী কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দ্বারা সম্পন্ন হতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিন সমর্থক মতামত, যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য, কিংবা আগের কোনো আইনগত জটিলতা সন্দেহের কারণ হতে পারে।
ডিভাইস সম্পূর্ণ মুছে ফেললে তা আরও সন্দেহের জন্ম দিতে পারে বলেও সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষভাবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়নরত ইরান ও চীনের শিক্ষার্থীদের আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
হার্ভার্ডের আইন বিভাগের আইনজীবী জেসন কোরাল জানান, ইরানীয় শিক্ষার্থীরা লোগান এয়ারপোর্ট এড়িয়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেই ভালো।
রুশ গবেষক কসেনিয়া পেত্রোভা নামক এক শিক্ষার্থী সম্প্রতি ফ্রান্স থেকে ফেরার সময় লোগান বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙের ভ্রূণ আমদানি করার অভিযোগ আনা হয়। চার মাস আটক থাকার পর জামিনে মুক্তি পেলেও পরে অতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করছে। প্রশাসন ইতিমধ্যে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২.৬ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা তহবিল বাতিল করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স ছাড় সুবিধা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে।
এইসব অবস্থার মধ্যেও আদালত হার্ভার্ডের পক্ষে প্রাথমিক আদেশ দিয়েছে। যদিও প্রশাসন আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে, স্পষ্ট নয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই নজরদারির মুখোমুখি হচ্ছেন কিনা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করতে যাচ্ছেন, তাদের উচিত আরও সতর্ক থাকা।