জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন কমিটি গঠনের বিধান বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন নির্দেশনায় পুনরায় এ দায়িত্ব ফিরে পেয়েছে ইসির নিজস্ব মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
ইতোমধ্যে “ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা-২০২৫” শিরোনামে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি।
পূর্ববর্তী কমিশনের আমলে, বিশেষ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন একটি নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
সেই নীতিমালায় উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি এবং জেলা পর্যায়ে ডিসির নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছিল। এসব কমিটি খসড়া তালিকা তৈরি করে তা জেলা বা মহানগর কমিটিতে পাঠাতো, যারা পরিদর্শনের মাধ্যমে মতামত দিত। পরে তা কমিশনে পাঠানো হতো।
কমিটিতে ইউএনও ছাড়াও থানা পুলিশের ওসি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকতেন। জেলা পর্যায়ে কমিশনার, এসপি, শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরাও যুক্ত থাকতেন।
তবে ইসির বর্তমান কমিশনের সংশোধিত নির্দেশনায় এসব কমিটি বিলুপ্ত করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শুধুমাত্র ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গড়ে প্রতি তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং প্রতি ৫০০ পুরুষ ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। নদীভাঙন কিংবা অন্যান্য কারণে কোনও কেন্দ্র অনুপযুক্ত হলে বা নতুন ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নতুন কেন্দ্র প্রয়োজন হলে তা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থাপন করতে হবে।
ভোটারদের চলাচল ও ভৌগোলিক দিক বিবেচনা করে কেন্দ্র নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। দুই কেন্দ্রের মধ্যবর্তী দূরত্ব তিন কিলোমিটারের বেশি হওয়া যাবে না এবং খুব কাছাকাছিও থাকা যাবে না। এছাড়া একটি কেন্দ্রের আশপাশে আরও কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও দূরের কেন্দ্রে ভোটার পাঠানো যাবে না।
এছাড়া যেসব কেন্দ্র বর্তমানে ভালোভাবে কাজ করছে, সেগুলো যতটা সম্ভব অপরিবর্তিত রাখার পরামর্শও রাখা হয়েছে।
নতুন নির্দেশিকাটি নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ইসির স্বাধীনতা আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।