বিশ্ব ফুটবলে বড় পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হতে যাচ্ছে ৩২ দলের সম্প্রসারিত ক্লাব বিশ্বকাপ। এক বিলিয়ন ডলারের পুরস্কারমূল্যের এই প্রতিযোগিতা নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে বিতর্ক। বিশেষ করে ফুটবলারদের ওপর বাড়তি চাপ এবং জাতীয় ও মহাদেশীয় ক্লাব প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই টুর্নামেন্ট এমন এক সময় আয়োজন করা হয়েছে, যখন ফুটবল ক্যালেন্ডার ইতিমধ্যে ঠাসা। ফলে শীর্ষ ফুটবলারদের শারীরিক ও মানসিক ধকলের বিষয়টি সামনে এসেছে।
ইউরোপ থেকে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসিসহ ১২টি দল অংশ নিচ্ছে। সম্ভাবনা রয়েছে যে এসব দল ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে সাতটি ম্যাচ খেলবে। ১৩ জুলাই হবে ফাইনাল।
সর্বোচ্চ পারফর্ম করা ইউরোপীয় ক্লাবের জন্য সম্ভাব্য পুরস্কার ১২৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে এতে করে জাতীয় লিগগুলোর কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন স্পেনের লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবাস।
তিনি বলেন, “ক্লাব বিশ্বকাপ মডেল জাতীয় লিগের ভারসাম্য নষ্ট করছে।”
যদিও লিভারপুল ও বার্সেলোনা এবার অংশ নিচ্ছে না। এতে করে তারা নিজেদের খেলোয়াড়দের বিশ্রামের সুযোগ দিচ্ছে, যা আগামী মৌসুমে তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন ইংল্যান্ডের কোচ থমাস টুখেল।
তবে ইউরোপের বাইরে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর জন্য আর্থিক দিক থেকে এটি বড় সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকার মামেলোডি সানডাউন্স ক্লাব ন্যূনতম প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার পাবে, যা দেশের নয়টি ঘরোয়া শিরোপার পুরস্কারের সমান।
ওশেনিয়ার অ্যাকল্যান্ড সিটি এরই মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে। এবার শুধুমাত্র অংশগ্রহণ ফি হিসেবেই পাচ্ছে ৩.৫ মিলিয়ন ডলার।
তবে শীর্ষ ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়দের ওপর এই টুর্নামেন্টের বাড়তি চাপ তৈরি হবে। পিএসজির মিডফিল্ডার ভিটিনহা চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে ৫২টি ম্যাচ খেলেছেন। এখন তাকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে হবে। এরপর সামান্য বিরতি নিয়ে আবারও নতুন মৌসুম শুরু হবে।
এই ধারাবাহিক খেলার ফলে ফুটবলারদের অবকাশ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে ইউরোপের ফুটবলারের সংগঠন ফিফপ্রো আগেই ম্যাচের সংখ্যা কমানোর দাবিতে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছিল।
ইংল্যান্ডের পেশাদার ফুটবলারদের অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী মাহেতা মোলাঙ্গো বলেন, “টানা দীর্ঘ ও চাপপূর্ণ মৌসুম খেলোয়াড়দের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তারা ভাবছে, সামনে তাদের কোনও ছুটি নেই।”
জাতীয় লিগগুলোও ফিফার নতুন এই টুর্নামেন্টের জন্য নিজেদের ক্যালেন্ডার পরিবর্তনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
প্রিমিয়ার লিগের প্রতিনিধি ম্যাথিউ মোরেউল বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বিশেষ করে ফিফা, ম্যাচের সংখ্যা বাড়িয়ে ফেলেছে। এখন ক্যালেন্ডার পুরোপুরি স্যাচুরেটেড হয়ে পড়েছে।”
এদিকে, ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে চলমান কনকাকাফ গোল্ড কাপের গুরুত্বও কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলের কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনো জানিয়েছেন, ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে তিনি শীর্ষ ফুটবলারদের পাচ্ছেন না।
যদিও পিএসজির বর্তমান কোচ লুইস এনরিক বলেন, “আমি মনে করি এটি অসাধারণ একটি প্রতিযোগিতা।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে ক্লাব বিশ্বকাপ ফুটবল কাঠামোর ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। খেলোয়াড়দের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং ফুটবলের ভারসাম্য রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।