গ্রীষ্মের তীব্র তাপে উত্তপ্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিবাদ ও সাম্প্রতিক দাবানলের ক্ষতচিহ্ন এখনো স্পষ্ট, তখন একটি বিষয় বরাবরের মতোই ধ্রুব হয়ে দাঁড়িয়েছে—সিনেসপিয়া।
সিনেসপিয়ার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নাভিদ সিনাকি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানান, হলিউড ফরএভার কবরস্থানে অনুষ্ঠিত এই গ্রীষ্মকালীন সিনেমা প্রদর্শন কেবল একটি বিনোদন নয়, বরং রূপান্তরমূলক এক অভিজ্ঞতা।
“আমি যখন বলি কবরস্থান আমার আনন্দের জায়গা, অনেকেই অবাক হন। কিন্তু সত্যি বলতে, এই জায়গায় সিনেমা দেখা, অনুষ্ঠান করা, মানুষের সাথে সময় কাটানো—এই অভিজ্ঞতা যেন বিদ্যুতায়িত,” বলেন সিনাকি।
সম্প্রতি আইস-এর (ICE) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব নিয়ে শহরের উত্তেজনার মধ্যে এমন অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে এক ধরণের মানসিক মুক্তি। “আঙ্গেলিনোরা একত্রিত হচ্ছেন, কেউ উদযাপনের জন্য, কেউ প্রতিবাদের জন্য। এতে করে একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন তৈরি হচ্ছে,” জানান সিনাকি।
শনিবার বিক্রিত ‘শোগার্লস’-এর ৩০তম বার্ষিকী প্রদর্শনীর পূর্বে তিনি জানান, সিনেমা নির্বাচন এখন যেন এক প্রকার দায়িত্ব। “আপনাকে ভাবতে হয়, সিনেমার শেষে মানুষের মনোভাব কেমন হবে, তারা পার্টি মুডে থাকবে, নাকি কিছুটা ভাবুক হয়ে উঠবে।”
প্রদর্শনীতে থিম অনুযায়ী থাকছে ‘হ্যাভেনলি সিজারস’-স্টাইল ফটো বুথ। যদিও তিনি জানান, স্ট্রিপার পোল নিয়ে আলোচনা হলেও সেটি নিরাপত্তার কারণে বাদ পড়েছে।
‘শোগার্লস’ এর পর সিনেসপিয়ার গ্রীষ্মকালীন তালিকায় রয়েছে ‘ফেরিস বুইলারস ডে অফ’ (২১ জুন), ‘কাসাব্লাঙ্কা’ (২৮ জুন), ‘টপ গান’ (৪ জুলাই), ‘লা লা ল্যান্ড’ (৫ জুলাই), ‘ইট’ (১২ জুলাই), ‘রোমি অ্যান্ড মিশেলস হাইস্কুল রিইউনিয়ন’ (১৯ জুলাই) এবং ‘দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি’ (২৬ জুলাই)।
এই উৎসবের মাঝেই শহরে রয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ডিটিএলএর এক বর্গমাইল এলাকায় লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস তিন রাত ধরে ঘোষণা করেছেন সূর্যাস্ত-থেকে-ভোর পর্যন্ত কারফিউ। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আইস অভিযানের প্রতিবাদে শহরে পাঠানো হয়েছে প্রায় ৫,০০০ জাতীয় সেনা।
গভর্নর গ্যাভিন নিউজম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ বলে উল্লেখ করেন এবং জানান যে, এটি রাজ্য, নিরাপত্তা বাহিনী এমনকি সাধারণ নাগরিকদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
এক ফেডারেল বিচারক ট্রাম্পকে ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের নিয়ন্ত্রণ গভর্নরের হাতে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেও, পরে আপিল আদালত সে রায় স্থগিত করে দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে, সিনেসপিয়ার চলচ্চিত্র প্রদর্শন যেন আশ্রয় হয়ে উঠেছে হাজারো মানুষের জন্য। যেখানে তারা অন্তত কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যেতে পারেন বাইরের উত্তাপ, রাজনীতি ও আতঙ্ক। এখানে সিনেমা কেবল সিনেমা নয়, বরং শহরের এক শান্তির কোণ।