“ব্ল্যাকপিংক ইন ইয়োর এরিয়া”—এই বাক্য এখন শুধু গানের লাইন নয়, বরং একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতি। ২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশের পর দক্ষিণ কোরিয়ান গার্ল ব্যান্ড ব্ল্যাকপিংক হয়ে উঠেছে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
জিসু, জেনি, রোজ এবং লিসা—এই চার সদস্যের দলটি কেবল সংগীতশিল্পী নয়, তাঁরা ফ্যাশনের আইকন, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবেও বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
৫ জুলাই শুরু হচ্ছে তাঁদের “ডেডলাইন ওয়ার্ল্ড ট্যুর”।
ব্ল্যাকপিংক গঠিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ বিনোদন প্রতিষ্ঠান ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্টের তত্ত্বাবধানে। তাঁদের পেছনে ছিল দীর্ঘ প্রশিক্ষণ—গান, নাচ, ভাষা ও মঞ্চে আত্মপ্রকাশের অনুশীলন।
২০১৬ সালে ‘বুমবায়াহ’ ও ‘হুইসেল’ শিরোনামের দুটি গানের মাধ্যমে তাঁদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষায় গাওয়া এই গানগুলোর ইলেকট্রনিক সাউন্ড ও আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে।
এই ব্যান্ডের মাধ্যমে কোরিয়ান সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক বিস্তার—হ্যাল্লিউ তরঙ্গ—আরও জোরালো হয়। তাঁদের ইউটিউব চ্যানেলে অনুসারীর সংখ্যা ৯ কোটির বেশি, যেখানে পাওয়া যায় গান, অনুশীলনের ভিডিও এবং তাঁদের ব্যক্তিজীবনের ঝলক।
দক্ষিণ কোরিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজ বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম জুলাভনিক বলেন, “ব্ল্যাকপিংক এমন একটি উদাহরণ যেখানে শিল্পীরা কোরিয়ান পরিচয়ের বাইরে গিয়ে বৈশ্বিক রুচির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন।”
চার সদস্যের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে বিশ্বদর্শকদের মন জয় করেছেন। নিউ জিল্যান্ডে বেড়ে ওঠা জেনি চ্যানেলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সুপরিচিত। জিসু নান্দনিকতার প্রতীক এবং সফল অভিনেত্রী। রোজের আবেগপূর্ণ কণ্ঠ ও মেলানকোলিক স্টাইল তাঁকে আলাদা করেছে। আর থাইল্যান্ডের লিসা নৃত্যদক্ষতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতির জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।
তাঁদের ফ্যাশন-সংক্রান্ত প্রভাবও ব্যাপক। চ্যানেল, ডিওর, সেন্ট লরেন্ট থেকে শুরু করে ম্যাক ও হেরা’র মতো বিউটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে তাঁরা কাজ করেছেন।
ব্ল্যাকপিংকের এই জনপ্রিয়তা কোরিয়ান বিনোদন শিল্পের এক কৌশলী বিপণন নীতির ফসল। বিভিন্ন দেশে স্থানীয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে তাঁরা বাজার সম্প্রসারণে সফল হয়েছেন, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।
এক সময় ছেলেদের ব্যান্ডই দক্ষিণ কোরিয়ান সংগীতজগতের মুখ ছিল। ব্ল্যাকপিংক সে ধারণা বদলে দিয়েছে। আত্মবিশ্বাস, পেশাদারিত্ব ও সৃজনশীলতা দিয়ে তাঁরা নতুন প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা।
এই চার সদস্যের ছোট দল, স্বল্প সংখ্যক কিন্তু জনপ্রিয় গান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠনের মিশ্রণকে বলা হচ্ছে “ব্ল্যাকপিংক ইফেক্ট”। এই ধারাটি ইতোমধ্যে কেপপ জগতে এক প্রতিষ্ঠিত মডেল হয়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে ভক্তদের জন্য, ব্ল্যাকপিংক আবারও তাঁদের মঞ্চে ফিরছে। আর সেই যাত্রা শুরু হচ্ছে এই জুলাইয়ে।