গাজীপুরে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে ১০ বছর বয়সী এক ছাত্র নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিক্ষক তাকে বেধড়ক মারধরের পর বস্তায় ভরে কড়া রোদে ফেলে রাখেন। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাটিকে “অমানবিক” বলে আখ্যায়িত করেছে। শিশু অধিকারের সংগঠনগুলো বলছে, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারে প্রচলিত শারীরিক শাস্তির বহিঃপ্রকাশ।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টের রায় ও সরকারের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবায়নে চরম গাফিলতি দেখা যাচ্ছে।
শিশুদের ওপর এই ধরনের সহিংস আচরণ শুধু শারীরিক ক্ষতই নয়, মানসিক ট্রমা ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি বিশ্বাস হারানোর জন্ম দেয়। ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং সমাজে সহিংসতা ও দমননীতিকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তবে তা হওয়া উচিত সহানুভূতি, ইতিবাচক উৎসাহ ও সংলাপের মাধ্যমে। শারীরিক শাস্তি কোনোভাবেই কার্যকর শিক্ষা উপায় নয় বরং তা সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে।
একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে চাইলে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া জরুরি। শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন নয়, দরকার এর সঠিক প্রয়োগ ও সচেতনতা সৃষ্টি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে দ্রুত বিচার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা ও শিশু সুরক্ষা সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম বলেছে, “শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শিশুরা যেন নিরাপদ শৈশব পায়, সেটিই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার।”
এই ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মসূচি ও প্রচার চালানোর তাগিদ উঠেছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে শিশুদের প্রতি মানবিক আচরণ গড়ে তুলতে এখনই সময় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের।