নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি তার জয়োৎসবের ভাষণে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ঐতিহাসিক “Tryst with Destiny” ভাষণ থেকে দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেন—যা তার meteoric উত্থানের এক প্রতীকী পরিসমাপ্তি ঘটায়।
ভাষণ শেষে তিনি মঞ্চ ছাড়ার সময় পেছনে বাজছিল না নিউইয়র্কের কোনো বিখ্যাত সুর, বরং বলিউডের জনপ্রিয় গান “ধুম”।
৩৪ বছর বয়সি মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে একাধিক দিক থেকে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছেন—তিনি শহরটির প্রথম মুসলিম ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় মেয়র, এবং শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ নেতৃত্ব।
ব্রুকলিনের এক সংগীত ভেন্যুতে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন,
“আমি তরুণ—বয়স বাড়াতে যত চেষ্টা করি, ব্যর্থ হই। আমি মুসলিম, আমি এক গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী, এবং সবচেয়ে বড় কথা—এ নিয়ে আমি ক্ষমা চাই না।”
দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুততম বর্ধনশীল সম্প্রদায়গুলোর একটি। দেশটিতে এদের সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি, এবং তারা ক্রমশ রাজনীতিতেও শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন—যেমন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস, যার মা ছিলেন ভারতীয়।
ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাচিত কমিশনার কিশান পুত্তা বলেন, “প্রার্থীদের মধ্যে তাদের জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশের স্বাচ্ছন্দ্য এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।”
তিনি উদাহরণ টানেন ভার্জিনিয়ার নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর গজালা হাশমির কথা, যিনি তার জীবনীতে প্রথমেই উল্লেখ করেছেন যে তিনি রাজ্যের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় সিনেট সদস্য।
পুত্তা বলেন, “এটা শুধু বড় অভিবাসী শহরগুলোর ব্যাপার নয়। এখন প্রার্থীরা নিজেদের পরিচয় নিয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী।”
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি ভারতের বিশিষ্ট দুই নাগরিক—অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের সন্তান। তিনি ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার, জ্যাকসন হাইটসের এক কাবাব দোকানকে নিজের প্রিয় রেস্তোরাঁ বলেন, এবং নির্বাচনের আগ মুহূর্তে লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরে ট্যাক্সিচালকদের মধ্যে প্রচারণা চালান—যাদের অনেকেই দক্ষিণ এশীয়।
পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট সারা সাধওয়ানি বলেন, “মামদানির খোলামেলা পরিচয় রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়। তিনি পার্থক্যকে গোপন না করে গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। এটি দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানদের জন্য এক প্রতীকী স্বীকৃতির মুহূর্ত।”
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মামদানির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা চালালেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিকভাবে এই সম্প্রদায় ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিলেও ট্রাম্প গত নির্বাচনে কিছু অগ্রগতি করেছিলেন।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডানপন্থী অনলাইন কর্মীরা ভারতীয় আমেরিকানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাত্মক মন্তব্যে জড়িয়েছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্স ভারতীয়, কিন্তু সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, “সে যদি খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়, আমি খুশি হব।” এ মন্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ট্রাম্পপন্থী ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক বিভেক রামাস্বামী মন্তব্য করেন, “রিপাবলিকানদের জন্য শিক্ষা হলো—পরিচয় রাজনীতি বাদ দিন, এটা আমাদের জন্য কাজ করে না।”
দীর্ঘদিনের রিপাবলিকান কণ্ঠস্বর দিনেশ ডিসুজা এক্স-এ লেখেন, “ডানপন্থার এক উচ্চকণ্ঠ গোষ্ঠী বলেছিল, ‘ইন্ডিয়ানরা ঘরে ফিরে যাও।’ এবং তারা তাই করেছে—ডেমোক্র্যাট পার্টিতে।”
