ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : আজ শুক্রবার বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় তিনি নিহত হন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত, দলীয় কার্যালয়ে পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং আলোচনা সভা।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বর্ধনকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি শৃঙ্খলাবোধ ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কাকুল সামরিক একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে কমিশনপ্রাপ্ত হন।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কেমকারান সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে সাহসিকতার জন্য তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘হিলাল-ই-জুরাত’ খেতাবে ভূষিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে চট্টগ্রামে মেজর জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।
পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের অধীনে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’ গঠনের নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধকালীন অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
রাষ্ট্রপতি ও রাজনৈতিক যাত্রা
স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ এবং পরে চিফ অফ আর্মি স্টাফ হন। ১৯৭৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। তার শাসনামলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।
নিহত হওয়া ও উত্তরাধিকার
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একটি অংশের হাতে তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় গোটা দেশ শোকাহত হয়। তাকে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশের ‘জিয়া উদ্যান’-এ সমাহিত করা হয়।
তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা তার স্মৃতিকে স্মরণ করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই দিনটি প্রতিবছর জাতীয়ভাবে পালন করে তারা তার অবদানকে সম্মান জানান।