ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৫, ০১:৪৬
লাইফস্টাইল ডেস্ক
বাংলা সংস্কৃতিতে বর্ষা এলেই খিচুড়ির হাঁড়ি চড়ানো যেন এক অলিখিত নিয়ম। মেঘলা দিনে ধোঁয়া ওঠা গরম খিচুড়ির সঙ্গে আলু ভর্তা বা বেগুন ভাজা, এ যেন বাঙালির চিরচেনা দৃশ্য। তবে এই জনপ্রিয়তা শুধুই স্বাদের কারণে, নাকি এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য ও কিছু বাস্তবিক ব্যাখ্যাও?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খিচুড়ি কেবল খাবার নয়; এটি ইতিহাস, পরিবেশ এবং দৈনন্দিন বাস্তবতার এক চমৎকার সংমিশ্রণ।
আদি উৎস কোথায়?
খিচুড়ির ইতিহাস বহু পুরোনো। গবেষণায় দেখা গেছে, ১২০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে বাংলায় এই খাবারের প্রচলন ঘটে। প্রাচীন সাহিত্য ‘মনসামঙ্গল’-এও খিচুড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়।
অনেকের মতে, খিচুড়ি জনপ্রিয় করেন বাউলরা। পথে ঘাটে গান গেয়ে দক্ষিণা হিসাবে পাওয়া চাল-ডাল একত্রে রান্না করেই তৈরি হতো এই পদ।
অন্যদিকে, ইতিহাসবিদদের মতে, খিচুড়ির উল্লেখ পাওয়া যায় চাণক্যের লেখায়, সেলুকাসের পর্যবেক্ষণে এবং এমনকি আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থেও। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির নাকি পেস্তা ও কিসমিস মিশিয়ে একধরনের ‘লাজিজা’ খিচুড়ি খেতেন।
বর্ষা ও খিচুড়ি: বাস্তবতা ও বিজ্ঞান
গ্রামবাংলায় বর্ষাকালে বন্যা ও কাদা জলে বাজারে যাওয়া কঠিন হয়ে যেত। তখন গৃহিণীরা ঘরের চাল-ডাল দিয়েই সহজে রান্না করতেন খিচুড়ি।
আরেকটি কারণ ছিল রান্নার সরলতা, একবার উনুনে আগুন জ্বালিয়ে চাল-ডাল একসঙ্গে রান্না করা যেত সহজেই।
তবে এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। খিচুড়ি একটি গুরুপাক খাবার, মানে এটি হজমে সময় নেয়। গরমে খেলে সমস্যা হতে পারে। তাই শীত বা বৃষ্টির ঠান্ডা আবহাওয়াই এর জন্য উপযোগী বলে মনে করেন অনেকে।
সংস্কৃতি ও স্বাদে খিচুড়ি
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ঢাকার পরিবার, খিচুড়ি সবখানেই রয়েছে। কেউ খান ডিমভাজি দিয়ে, কেউ বা ইলিশ ভাজা। খিচুড়ি যেন আবহাওয়ার সঙ্গে মিলে তৈরি করে এক অনন্য স্বাদের অভিজ্ঞতা।
আজকের দিনে খিচুড়ি কেবল পেট ভরানোর নয়, বরং নস্টালজিয়ার অংশ। তাই বৃষ্টির দিনে শুধু স্বাদ নয়, ঐতিহ্যও ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি প্লেটে।
খিচুড়ি এখন আর শুধু বাউলদের খাবার নয়, বরং বাঙালির বর্ষাকালীন সংস্কৃতির অংশ। ইতিহাস, প্রয়োজন, এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তির সঙ্গে মিশে এটি হয়ে উঠেছে একটি আবেগের নাম।