গাজায় চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার মানুষ এমন আঘাত পেয়েছেন যা তাদের জীবনের গতিপথ পাল্টে দেবে। এর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের এই স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুদ্ধে আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এমন আঘাতে ভুগছেন যা আজীবন তাদের সক্ষমতা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করবে।
ডব্লিউএইচওর ফিলিস্তিনি অঞ্চলের প্রতিনিধি রিচার্ড পিপারকর্ন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজীবন পুনর্বাসনের প্রয়োজন হবে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার।
ডব্লিউএইচওর সমর্থনে পরিচালিত ২২টি জরুরি মেডিকেল টিম, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য অংশীদারের তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ৪১ হাজার ৮৪৪ জন গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ হাজারের বেশি মানুষের অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে কারণ এতে দুর্ঘটনাস্থলে সরাসরি হওয়া অঙ্গহানির তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
প্রতিবেদনের প্রধান লেখক পিট স্কেলটন বলেন, শিশুদের মধ্যে অঙ্গচ্ছেদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস জানান, সবচেয়ে বেশি পুনর্বাসন প্রয়োজন বিস্ফোরণে হাত ও পায়ে আঘাত পাওয়া রোগীদের। তিনি বলেন, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি, মারাত্মক দগ্ধ হওয়া এবং চোখ ও মুখমণ্ডলে আঘাতও সাধারণ, যা স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ও বিকৃতির কারণ হচ্ছে।
টেড্রোস সতর্ক করে বলেন, “যে সময়ে পুনর্বাসন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখনই হামলা ও অস্থিরতার কারণে এই সেবা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিস্ফোরণে শুধু মানুষই আহত হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে চিকিৎসা কেন্দ্রও।”
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৪টি আংশিকভাবে কার্যকর আছে। যুদ্ধে আগে গাজায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফিজিওথেরাপিস্ট ও ৪০০ অকুপেশনাল থেরাপিস্ট থাকলেও অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং অনেকে নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিপুল সংখ্যক অঙ্গচ্ছেদ হওয়া সত্ত্বেও গাজায় বর্তমানে মাত্র আটজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি ও তা রোগীদের উপযোগী করে দিতে পারেন।
সংস্থাটি বলেছে, নতুন করে আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং দুর্ভিক্ষকবলিত গাজায় স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
