পশ্চিম ইউরোপের মানুষ জুন মাসে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গরমের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপার্নিকাস জানিয়েছে, রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রায় পরপর দুটি তাপদাহের মধ্যে দিয়ে গেছে অঞ্চলটি।
গবেষণা বলছে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন এই গরমকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা হাজারো মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও বলকান অঞ্চলে “ফিলস লাইক” তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। পর্তুগালের উত্তরে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ডিগ্রি বেশি।
এই তাপমাত্রা “চরম তাপজনিত চাপ” তৈরি করে, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে ব্যাহত করে দেয়।
বিভিন্ন শহরে রাতের তাপমাত্রাও ছিল বিপজ্জনক। এসব ‘ট্রপিকাল নাইট’-এ তাপমাত্রা এতটাই ছিল যে, ঘুমানোর সময় শরীর আর ঠান্ডা হতে পারেনি।
এই তাপদাহ প্রবীণ, অসুস্থ, শিশু ও খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে, ২৩ জুন থেকে ২ জুলাইয়ের মধ্যে ১২টি শহরে প্রায় ২৩০০ জনের মৃত্যু হতে পারে তাপদাহজনিত কারণে। এর মধ্যে প্রায় ১৫০০ মৃত্যু হতো না যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব না থাকত।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষক গ্যারিফ্যালোস কনস্টানটিনোডিস বলেন, “মাত্র ২ থেকে ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে।”
জুন মাসে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। এটি রাতের বেলায় উপকূলীয় অঞ্চলের ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং আর্দ্রতা বাড়িয়ে দেয়, যা গরমকে আরও ভয়ংকর করে তোলে।
কোপার্নিকাসের তথ্যমতে, গত মাসে ১২টি দেশ ও প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন মানুষ রেকর্ড গরমের সম্মুখীন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশও ছিল ভয়াবহ তাপপ্রবাহের কবলে। চীনের ১০২টি আবহাওয়া কেন্দ্র জুন মাসের রেকর্ড গরম নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে কিছু স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে এই গরমের প্রেক্ষাপটে দাবানল দেখা গেছে কানাডা ও দক্ষিণ ইউরোপে। ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন ও পাকিস্তানে।
কোপার্নিকাসের বিশ্লেষণ বলছে, জুন মাসটি ছিল বৈশ্বিকভাবে তৃতীয় উষ্ণতম। এর আগের দুইটি ছিল যথাক্রমে ২০২৪ ও ২০২৩ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এল নিনোর প্রভাব থাকলেও সেটি ফিকে হওয়ার পরও তাপমাত্রা রেকর্ড পর্যায়ে থেকে যাচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ মানবজাতির কার্বন নির্গমন ও শিল্প-কারখানাজনিত দূষণ।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু নীতি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।