Saturday, July 5, 2025
Homeবিনোদনউৎসব সিনেমায় জীবনের ছায়া, সমাজের প্রতিফলন

উৎসব সিনেমায় জীবনের ছায়া, সমাজের প্রতিফলন

চার্লস ডিকেন্সের অনুপ্রেরণায় তানিম নূরের নির্মিত 'উৎসব' চলচ্চিত্রে হাসি, কান্না ও উপলব্ধির সম্মিলন

তানিম নূরের পরিচালনায় “উৎসব” সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে গত ৭ জুন। পুরো চলচ্চিত্রে ছড়িয়ে আছে উৎসবের আমেজ, পারিবারিক উষ্ণতা এবং জীবনের প্রতি এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। বহুদিন পর বাংলা সিনেমায় এমন এক অনুভবনীয় গল্প এসেছে, যা একেবারে জীবনঘনিষ্ঠ।

চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারোল’ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া হলেও ‘উৎসব’ পুরোপুরি বাংলাদেশি বাস্তবতায় গড়া। এতে স্থান পেয়েছে পরিবার, সমাজ, স্মৃতি, অনুশোচনা এবং একসাথে থাকার গুরুত্ব।

সিনেমার প্রধান চরিত্র জাহাঙ্গীর, যিনি একজন ইভেন্ট ম্যানেজার। মোহাম্মদপুরের শান্তিনির পাড়ায় তার বসবাস। কিন্তু এলাকাবাসীর চোখে তিনি আত্মকেন্দ্রিক, কর্কশ ও নির্দয়। তার উপাধি হয়ে উঠেছে “খাইস্তা জাহাঙ্গীর”।

জাহাঙ্গীরের অতীত ও বর্তমান একসময় জটিলভাবে মিশে যায়। দুঃস্বপ্ন, ভৌতিক আবির্ভাবের মাধ্যমে তিনি মুখোমুখি হন এক শূন্য জীবনের, যেখানে অর্থই তার প্রধান চালিকা শক্তি ছিল।

ডিরেক্টর তানিম নূর সিনেমাটির প্রতিটি দিকেই বাংলাদেশি স্পর্শ রেখেছেন। পরিবারিক হৈচৈ, রঙিন ঘুড়ি, ফুটপাতের বিক্রেতাদের ভীড়—সবকিছুই পরিচিত, প্রাণবন্ত।

সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ জাহাঙ্গীরের শৈশব। ক্যামেরার কাজ নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে নব্বই দশকের আবহ। ঢাকার সাধারণ দৃশ্যপটকেও রূপ দিয়েছে কাব্যিক এক পরিপ্রেক্ষিতে।

অভিনয়ে নজর কেড়েছেন চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান ও অপি করিম। তাদেও মাধ্যমে সিনেমার আবেগ ও গল্প গভীরতা পেয়েছে। আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান তাদের সংযত অভিনয়ে দৃশ্যপটকে ভারসাম্য দিয়েছেন। তরুণ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সাদিয়া আইমান, সোম্ম জ্যোতি ও সুনেরাহ বিনতে কামাল দেখিয়েছেন প্রাণবন্ত পারফরম্যান্স।

‘উৎসব’ হাসি ও কান্নার সুষম সংমিশ্রণ। কমেডি ও হররের মাঝে থাকা সংলাপগুলো বাস্তব, হাস্যরসপূর্ণ এবং হৃদয়ছোঁয়া। চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতি এবং জাহাঙ্গীরের মুখে “কি, ভয় পাচ্ছিস?” কিংবা “হিজিবিজি” সংলাপগুলো দর্শকদের মন জয় করেছে।

এই সিনেমা কোনো নীতিবাক্য শেখায় না, বরং দর্শককে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে। সম্পর্কের জটিলতাগুলো আবেগের জায়গা থেকে বুঝিয়ে দেয় যে সমাজে অর্থ নয়, সম্পর্কই আসল শক্তি।

জাহাঙ্গীর ও জাসমিনের ছোটবেলার প্রেম কাহিনী সিনেমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ৯০ দশকের ঘরানায় নির্মিত এই রোমান্স অংশে আছে নস্টালজিয়া ও আন্তরিকতা।

সিনেমার আবেগঘন মুহূর্তগুলোতে সঙ্গীতও চমৎকারভাবে যুক্ত হয়েছে। “তুমি” (Level Five) ও “ধূসর সময়” (Artcell) গান দুটি গল্পের আবেগকে আরও গভীর করে তোলে।

ব্যস্ত জীবনে থেমে দাঁড়িয়ে কিছুটা চিন্তার জন্য এই সিনেমা একটি উপযুক্ত সুযোগ। এটি মনে করিয়ে দেয়, চারপাশের সম্পর্ক ও ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই জীবনের প্রকৃত অর্থ বহন করে।

যারা ভালো সিনেমার খোঁজে আছেন এবং আত্মবিশ্লেষণের এক মুহূর্ত খুঁজছেন, তাদের জন্য “উৎসব” হতে পারে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

RELATED NEWS

Latest News