Thursday, July 3, 2025
Homeআন্তর্জাতিকবিদেশি সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা, ইউএসএআইডি দপ্তর বিলুপ্ত

বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা, ইউএসএআইডি দপ্তর বিলুপ্ত

নতুন নীতিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ উদ্যোগে বড় পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, ইউএসএআইডি (USAID) দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ করে বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ‘অর্থনৈতিক সরলীকরণ’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, সহায়তা নির্ভর চ্যারিটি মডেল থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে দেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করবে এমন রাষ্ট্রগুলোকেই অগ্রাধিকার দেবে।

তিনি বলেন, “আমরা এমন দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেব যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে আগ্রহী এবং সক্ষমতা রাখে। আমাদের সম্পদ ব্যবহার করা হবে এমন স্থানে, যেখানে তা বহুগুণ প্রভাব ফেলতে পারে এবং বেসরকারি খাত, বিশেষত আমেরিকান কোম্পানির বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পারে।”

এই নতুন মডেল সহায়তার চেয়ে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেবে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, এটি চীনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ বিদেশি সহায়তা স্থগিত ও কেটে দিয়েছে। ইউএসএআইডি’র কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার কর্মচারী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। এতে করে বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেট প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউএসএআইডি’র অর্থায়ন বন্ধ হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে অতিরিক্ত ১.৪ কোটি মানুষ মারা যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য উন্নয়নে ইউএসএআইডি’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পূর্ব কঙ্গোতে সহিংসতা বাড়ার পর ধর্ষণ আক্রান্তদের জন্য জরুরি চিকিৎসা কিট সরবরাহ চুক্তিও বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সময় প্রতিষ্ঠিত ইউএসএআইডি ঠাণ্ডা যুদ্ধকালীন সময়ে বৈদেশিক সহায়তার সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে নিবন্ধিত সকল মানবিক সহায়তার ৩৮ শতাংশ দান করে থাকে। ২০২৩ অর্থবছরে তারা ৬১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে, যার অধিকাংশই ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে ব্যয় হয়।

বিশ্বের শীর্ষ এইচআইভি/এইডস কর্মসূচি ‘পেপফার’ ও আফ্রিকার বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমও এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, ইউএসএআইডি সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে ওবামা বলেন, “ইউএসএআইডি’র কার্যক্রম বন্ধ করা একটি দুঃখজনক এবং বিপজ্জনক পদক্ষেপ।”

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ভবিষ্যতে তাদের সহায়তা সীমিত, লক্ষ্যভিত্তিক এবং বাণিজ্য-নির্ভর হবে। তবে এতে আন্তর্জাতিক সহায়তা কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

RELATED NEWS

Latest News