Saturday, October 25, 2025
Homeআন্তর্জাতিককলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

মাদক পাচার বন্ধে ব্যর্থতার অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপে তীব্র কূটনৈতিক সংকট

যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের লাতিন মিত্র দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ওয়াশিংটনের অভিযোগ, পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন পাচার বন্ধে ব্যর্থ হয়েছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহভাজন মাদকবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছে।

বামপন্থী নেতা পেত্রো এই হামলাগুলোর বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি বিদ্রোহী ও অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি ও আত্মসমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে কলম্বিয়ার ছয় দশকের সংঘাত শেষ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তেমন অগ্রগতি হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, “গুস্তাভো পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর কোকেন উৎপাদন কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি মাদক চক্রকে বিকাশের সুযোগ দিয়েছেন এবং তা বন্ধে কিছুই করেননি।”

এর জবাবে পেত্রো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, তা মিথ্যা। আমার সরকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কোকেন জব্দ করেছে।” তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ আরও বলেন, “আমার সরকারের সময় কোকেন উৎপাদন নয়, বরং হ্রাস পেয়েছে।”

পেত্রো মন্তব্য করেন, তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা “একটি সম্পূর্ণ বিরোধাভাস।” তিনি জানান, নিজেকে রক্ষার জন্য একজন মার্কিন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন এবং রাজধানী বোগোতায় হাজারো সমর্থকের উদ্দেশে ভাষণে বলেন, তার যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ নেই।

এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পেত্রোর স্ত্রী, ছেলে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমান্দো বেনেদেত্তিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, তারা সবাই অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বেনেদেত্তি এক্স-এ লিখেছেন, তিনি কেবল পেত্রোকে মাদক ব্যবসায়ী নন বলার কারণে শাস্তি পেয়েছেন। তার ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী যুদ্ধ একটি প্রতারণা।”

নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ জব্দ হবে এবং কোনো মার্কিন নাগরিক তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন না।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন—পেত্রো যদি এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই তা করবে, এবং তা সুন্দরভাবে হবে না।”

গত সপ্তাহে ট্রাম্প কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেন এবং বুধবার ঘোষণা করেন, দেশটিতে সব অর্থায়ন বন্ধ করা হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পেত্রোর ভিসা বাতিল করেছে। এর আগে তিনি নিউ ইয়র্কে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে মার্কিন সেনাদের ট্রাম্পের আদেশ অমান্য করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিদেশনীতি বিশ্লেষক ব্রেট ব্রুয়েন বলেন, “ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা ও হামলা পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করছে। সামাজিক মাধ্যমে এটি জনপ্রিয় হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এটি বিপজ্জনক।”

রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে পেত্রো বলেন, “কলম্বিয়ার মাদকবিরোধী কার্যক্রমের মূল্যায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত।”

RELATED NEWS

Latest News