চলমান ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এবং তেহরানের বর্তমান নেতৃত্বকে উৎখাতের হুমকির প্রেক্ষিতে আবার আলোচনায় এসেছে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়— ১৯৫৩ সালের ইরানি সরকার পতন।
তৎকালীন সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যৌথভাবে ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে সরিয়ে দেন। কারণ তিনি ইরানের তেলসম্পদ জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা ছিল পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে।
তখনকার রাজার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন প্রচারণা, রাজনৈতিক চাপ এবং সামরিক হস্তক্ষেপের পথ বেছে নেয়। প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়, সেনাবাহিনীর অংশ বিশেষ এবং রাজপন্থীদের সহায়তায় সংগঠিত করা হয় বিক্ষোভ।
পরবর্তীতে সেই বিক্ষোভ এক সামরিক অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং মোসাদ্দেককে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল ফজলুল্লাহ জাহেদিকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
গোপন নথি অনুসারে, সিআইএ মাত্র দুই দিনের মধ্যেই পাঁচ লাখ ডলার সরবরাহ করে নতুন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে। এই গোপন ভূমিকার কথা ২০১৩ সালে সিআইএ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়। এমনকি ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও ঘটনাটিকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এই হস্তক্ষেপ ইরানিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল হয় আরও ভয়াবহ। দুর্নীতি, দমন-পীড়ন এবং বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে ১৯৭৯ সালে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটে শাহ শাসনের। প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি প্রজাতন্ত্র।
আজকের প্রেক্ষাপটে যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আবার তেহরানকে ‘শাসন পরিবর্তনের’ বার্তা দিচ্ছে, এমনকি খামেনিকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে— তখন সেই পুরনো অভিজ্ঞতা আবার আলোচনায়।
বিশ্লেষকদের মতে, ইতিহাস দেখায় বিদেশি হস্তক্ষেপ হয়তো সাময়িক রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে আরও জটিলতা, ক্ষোভ এবং সহিংসতা ডেকে আনতে পারে।
ইরানের জনগণ এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখন আগের চেয়ে আরও সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। ফলে বিদেশি চাপ নতুন করে কী ফল বয়ে আনবে, তা সময়ই বলবে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করে দেয়, বাহ্যিক হস্তক্ষেপে শাসন ফেলা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে তার প্রতিক্রিয়া অনেক গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।