Tuesday, October 14, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সরকারি চাকরি ছাঁটাই শুরু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সরকারি চাকরি ছাঁটাই শুরু

সরকারি অচলাবস্থার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি অচলাবস্থার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। হোয়াইট হাউস জানায়, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানো, যাতে তারা দ্রুত সরকার পুনরায় চালু করার বিষয়ে সমঝোতায় আসে।

শুক্রবার ট্রেজারি বিভাগ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দপ্তরে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। তবে মোট কতজন কর্মী প্রভাবিত হচ্ছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রশাসনের ধারণা, চলতি বছরে প্রায় ৩ লাখ সরকারি কর্মচারী চাকরি হারাতে পারেন।

ট্রাম্পের বাজেট প্রধান রাস ভাউট সামাজিক মাধ্যমে জানান, প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ছাঁটাই কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট বড় পরিসরের এবং এটি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব ফেলবে।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, সরকারি খাতে কাটছাঁটের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ বাড়ানোই তাঁর লক্ষ্য। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, “বেশ কয়েকটি ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত সংস্থা আসলে রাজনৈতিক প্রতারণার কেন্দ্র, এগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হবে।”

ডেমোক্র্যাট নেতারা এই পদক্ষেপকে ‘ভয় দেখানো’র প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে জানান, এটি আদালতে টিকবে না। সেনেটর প্যাটি মারি বলেন, “একটি সরকার বন্ধ থাকলেই প্রেসিডেন্টের নতুন ক্ষমতা আসে না যে তিনি ইচ্ছামতো ছাঁটাই শুরু করবেন। এভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি দপ্তর জানায়, কর্মীদের ছাঁটাই নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরও জানিয়েছে, “ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন অচলাবস্থার কারণে” তারা অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের ছাঁটাই করছে। শিক্ষা দপ্তরেও কর্মী কমানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অচলাবস্থায় যারা চাকরিতে টিকে আছেন, তাদেরও বেতন বন্ধ রয়েছে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংকট চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে ১৩ লাখ সক্রিয় সামরিক সদস্যও বেতন না পাওয়ার আশঙ্কায় আছেন— যা আধুনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “এটি এক বিষণ্ন দিন। ক্যাপিটলে এখন ভালো সময় যাচ্ছে না।”

রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, সেনেটে অর্থায়ন বিল পাসে অন্তত সাতজন ডেমোক্র্যাটের সমর্থন দরকার। ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানোর দাবি না মানা পর্যন্ত আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না।

রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় কংগ্রেস ভবনে একাধিক তর্ক-বিতর্কের ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিনিধি পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলনের সময় ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস রিপাবলিকান সদস্য মাইক লওলারকে উদ্দেশ করে বলেন, “চুপ থাকুন।” পরবর্তীতে তিনি লওলারকে “অশুভ ভাঁড়” বলে অভিহিত করেন।

৩০ সেপ্টেম্বর অর্থায়নের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর থেকেই সরকারি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। রিপাবলিকানদের পুনরায় অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব বারবার ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যাখ্যান করছে।

এই অচলাবস্থার ফলে অর্থনৈতিক প্রভাবও পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (BLS) জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে নির্ধারিত মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে দেরি হবে। সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার সঠিক পরিশোধ নিশ্চিত করতে তথ্য প্রকাশ ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকরাও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।

RELATED NEWS

Latest News