গভীর রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউস বাজেট নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যক্রমের বড় অংশ অচল হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার ফেডারেল চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
১৯৮১ সালের পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের ১৫তম সরকার অচলাবস্থা। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সতর্ক করেছে, শাটডাউনের কারণে এ মাসের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ থাকবে, বিমান চলাচলে শ্লথতা আসবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্থগিত হবে, সেনা সদস্যদের বেতন আটকে যাবে এবং প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার কর্মী সাময়িক ছুটিতে যেতে পারে। এতে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ সরকারি চাকরি কমানোর কথা রয়েছে। শাটডাউনকে ঘিরে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এটি আরও বড় পরিসরে চাকরি ও সরকারি কর্মসূচি কাটছাঁটের পথ তৈরি করতে পারে।
শাটডাউন শুরু হয় সেনেট একটি স্বল্পমেয়াদি ব্যয় বিল প্রত্যাখ্যান করার পর। বিলটি পাস হলে অন্তত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি কার্যক্রম চালু থাকত। ডেমোক্র্যাটরা প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে জানায়, রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাজেট সাত ট্রিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ১.৭ ট্রিলিয়ন এজেন্সিগুলোর কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত। বাকি বাজেটের বড় অংশ স্বাস্থ্য, অবসর ভাতা এবং ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার শাটডাউন অতীতের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কারণ হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, তারা ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ বাড়াতে সরকারি কর্মসূচি ও বেতন আরও কাটছাঁট করতে পারে।
শাটডাউনের প্রভাব ইতিমধ্যেই বিশ্ববাজারে পড়তে শুরু করেছে। ওয়াল স্ট্রিটে ফিউচার দরপতন হয়েছে, স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং এশীয় শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে দীর্ঘতম সরকার অচলাবস্থা হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, যা ৩৫ দিন স্থায়ী ছিল।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বর্তমান অচলাবস্থার পেছনে মূল ইস্যু হলো স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সম্প্রসারণ। ডেমোক্র্যাটরা চান এটি বাজেট বিলের অংশ হোক, অন্যদিকে রিপাবলিকানরা আলাদাভাবে আলোচনার পক্ষে।
সেনেট ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শাটডাউনকে ব্যবহার করছে। রিপাবলিকান নেতা জন থুন বলেছেন, বিলটিতে অতীতে ডেমোক্র্যাটরা যে ধরনের শর্ত মানতে রাজি ছিলেন, এবার শুধুমাত্র ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকার কারণে বিরোধিতা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রভাবের কারণে সমঝোতায় পৌঁছানো কঠিন হতে পারে। ফলে সরকারি অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
