Thursday, November 13, 2025
Homeআন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসের দীর্ঘতম শাটডাউন শেষ, ৪৩ দিন পর ফের সচল সরকারি কার্যক্রম

যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসের দীর্ঘতম শাটডাউন শেষ, ৪৩ দিন পর ফের সচল সরকারি কার্যক্রম

এক মাসেরও বেশি সময় বেতনহীন থাকা কর্মীরা কাজে ফিরছেন, কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থা রয়ে গেছে

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকার বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির প্রশাসন। ৪৩ দিন স্থায়ী এই শাটডাউনে এক মিলিয়নের বেশি সরকারি কর্মচারী বেতনহীন ছিলেন, বিমান চলাচল ব্যাহত হয়, এবং নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে পড়ে।

সরকার পুনরায় চালু হলেও রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটেনি। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অর্থব্যয় নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি সংক্রান্ত যে ইস্যুতে সেনেট ডেমোক্র্যাটরা সরকার বন্ধের সিদ্ধান্তে গিয়েছিল, সেটিও সমাধান হয়নি।

ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যেও বিভাজন দেখা দিয়েছে—একদিকে উদারপন্থীরা ট্রাম্পকে ঠেকাতে কঠোর অবস্থান চান, অন্যদিকে মধ্যপন্থীরা মনে করছেন, রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসে তাদের ক্ষমতা সীমিত।

সেনেট ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারের পদত্যাগ দাবি উঠেছে, যদিও তিনি চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

রয়টার্স–ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করছেন, ৪৭ শতাংশ দায় দিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটদের। অর্থাৎ, কোনো দলই স্পষ্ট বিজয়ী নয়।

সরকার পুনরায় চালু হলেও এই স্বস্তি সাময়িক হতে পারে, কারণ চুক্তিটি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর আবার নতুন শাটডাউনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এই শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগে। সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারী ও ফেডারেল রিজার্ভ অর্থনীতির অবস্থা মূল্যায়নে সমস্যায় পড়ে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (CBO) জানায়, এই বন্ধে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বিলম্বিত হয়েছে এবং জিডিপি ১.৫ শতাংশ কমেছে, যার মধ্যে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি আর পূরণ হবে না।

শাটডাউনের সময় হাজার হাজার বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকর্মী ছুটি নেয়ায় শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়। এখন ধীরে ধীরে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (SNAP)-এর আওতায় থাকা ৪২ মিলিয়ন মানুষও এখন নিশ্চিন্তে খাদ্য সহায়তা পেতে শুরু করেছেন।

শাটডাউনের সময় অনেক সরকারি কর্মচারীকে বেতন ছাড়া কাজ করতে হয়েছে, আবার অনেকে ছুটিতে পাঠানো হয়। তারা ২০১৯ সালের আইনের আওতায় বকেয়া বেতন পাবেন, যদিও হোয়াইট হাউস কিছু পেমেন্ট আটকে রাখার হুমকি দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শাটডাউনের সময় হাজারো সরকারি কর্মী বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা এই চুক্তির ফলে আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে, কংগ্রেসে রিপাবলিকান সদস্য ব্রায়ান ফিটজপ্যাট্রিক বলেন, “আমাদের উচিত আইনি ভাবে সরকার বন্ধ নিষিদ্ধ করা। এটি সম্পূর্ণ উন্মাদনা—নীতিগত বিরোধ মেটাতে সরকার বন্ধ করা কখনও হওয়া উচিত নয়।”

ডেমোক্র্যাট সদস্য হ্যাঙ্ক জনসন বলেন, “আমেরিকান জনগণের স্বাস্থ্যসেবা রক্ষার এই লড়াইটা মূল্যবান ছিল। আমরা বিষয়টি জাতীয় আলোচনায় আনতে পেরেছি।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই শাটডাউন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান দলের মধ্যকার বিভাজনকে আরও গভীর করেছে, যা আগামী বছরের শুরুতেই আবার নতুন রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News