মার্কিন সামরিক বাহিনী পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে আরও একটি নৌকায় হামলা চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন প্রধান পিট হেগসেথ। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল কমপক্ষে ৬২ জনে।
বুধবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই হামলা চালানো হয়। হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে ঘটনাটি নিশ্চিত করেন এবং একটি ভিডিও প্রকাশ করেন যেখানে একটি নৌকা স্থিরভাবে ভাসছিল, এরপর বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও আগুন দেখা যায়।
আগের মতোই ভিডিওটির কিছু অংশ ধোঁয়াটে করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নৌকায় ঠিক কতজন ছিলেন তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
হেগসেথ বলেন, “এই নৌযানটি মাদক পাচারে জড়িত বলে আমাদের গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এটি পরিচিত মাদক পরিবহন রুটে চলাচল করছিল এবং মাদক বহন করছিল।”
তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে চালু হওয়া এসব হামলা আসলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, এমনকি লক্ষ্যবস্তুরা মাদক পাচারকারী হলেও। ওয়াশিংটন এখন পর্যন্ত এসব হামলার কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি যে টার্গেটরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি ছিল বা মাদক পাচারে সরাসরি জড়িত ছিল।
সোমবার একই অঞ্চলে চারটি নৌকার ওপর হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হন এবং একজন বেঁচে যান। যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোকে ওই বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে উদ্ধার করার আহ্বান জানায়, তবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাম জানান, উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এরই মধ্যে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বুধবার বলেন, দেশটি তিনটি সন্দেহভাজন মাদকবাহী বিমান আটক করেছে। তিনি জানান, “একটি বিমান ক্যারিবিয়ান হয়ে প্রবেশ করেছিল, আমরা সেটি সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করি। আজ আরও দুটি বিমান উত্তর দিক থেকে এসেছে, আমাদের আইনের অধীনে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি… বুম, ব্যাম, ব্যাঙ!”
তিনি এই পদক্ষেপকে “সার্বভৌমত্বের প্রয়োগ” বলে আখ্যা দেন।
ওয়াশিংটন দাবি করছে, তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু কারাকাসের আশঙ্কা, এটি আসলে মাদুরো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সামরিক প্রস্তুতি।
বর্তমানে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র সাতটি নৌযুদ্ধজাহাজ, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড মোতায়েন করেছে, যা অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মার্কিন প্রশাসন মাদুরোকে “মাদক সম্রাট” হিসেবে অভিযুক্ত করেছে এবং তার গ্রেফতারে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভেনেজুয়েলায় মাদক উৎপাদন হয় না; দেশটি কেবল অনিচ্ছাকৃতভাবে কলম্বিয়ান কোকেন পরিবহনের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
