যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ মেটাতে নতুন কাঠামোতে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডনে দুই দিনের বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া।
বৈঠকের আলোচনায় প্রধানত খনিজ এবং প্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানি সংক্রান্ত বিরোধের সমাধান নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে দুই দেশের মধ্যে যে মূল বাণিজ্য ঘাটতির বিষয় রয়েছে, সে বিষয়ে কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ফোনে কথা বলেছিলেন পরিস্থিতি শান্ত করতে। এর পরপরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য উপমন্ত্রী লি চেংগাং জানান, দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে আগে হওয়া আলোচনার ভিত্তিতে এবং জেনেভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে একটি বাস্তবায়ন কাঠামোতে একমত হওয়া গেছে। যদিও পরবর্তী বৈঠকের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো জানানো হয়নি।
চীনা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেং। তার সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং লি চেংগাং। মার্কিন পক্ষ থেকে অংশ নেন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের ঐতিহাসিক ল্যাংকাস্টার হাউজে।
সাবেক মার্কিন বাণিজ্য আলোচক ও বর্তমানে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার জানান, ৯০ দিনের সময়সীমার মধ্যে ৩০ দিন ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে। এখন মাত্র ৬০ দিন হাতে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সমাধানে।
জেনেভার বৈঠকে উভয় পক্ষ ৯০ দিনের জন্য একে অপরের ওপর প্রয়োগ করা অধিক শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে উন্নত সেমিকন্ডাক্টর, শিক্ষার্থীদের ভিসা এবং দূর্লভ খনিজ রপ্তানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
বিশ্বের বৃহত্তম দূর্লভ খনিজ উৎপাদনকারী দেশ চীন সম্প্রতি এই খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই খনিজগুলোর ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের গাড়ি নির্মাতা ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে, চীন চায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের উন্নত সেমিকন্ডাক্টর তৈরির প্রযুক্তি রপ্তানিতে আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নিক। তবে কাটলার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনায় রাজি হওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। এর ফলে ভবিষ্যতের আলোচনায় চীন এই ইস্যুটি পুনরায় তুলতে পারে।
ওয়াশিংটনে এক ফেডারেল আপিল আদালত মঙ্গলবার সরকারের ওপর আরোপিত ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত শুল্ক বজায় রাখার অনুমতি দিয়েছে। এতে চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশের ওপরেও এই শুল্ক বহাল থাকবে।
ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি চান মার্কিন পণ্যের জন্য চীনের বাজার উন্মুক্ত হোক।
হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “আমরা যদি চীনের বাজার উন্মুক্ত করতে না পারি, তাহলে হয়তো আমরা কিছুই করবো না। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য চীনের বাজার উন্মুক্ত করা।”