Friday, September 26, 2025
Homeজাতীয়বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতে সংস্কারের সুপারিশ ইউএনডিপি ও ইউনেসকোর যৌথ প্রতিবেদনে

বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতে সংস্কারের সুপারিশ ইউএনডিপি ও ইউনেসকোর যৌথ প্রতিবেদনে

মিডিয়ার স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করতে আইনগত সংস্কার, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বহুধারার গণমাধ্যম গঠনে আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউনেসকো। বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি যৌথ মূল্যায়ন প্রতিবেদন।

“বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি: স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বহুধারার গণমাধ্যমের মূল্যায়ন” শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ সময়কালে পরিচালিত হয়। এতে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যম খাতে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, নীতিনির্ধারক, সুশীল সমাজ, একাডেমিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই মূল্যায়নে উঠে এসেছে বেশ কিছু কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের প্রস্তাব।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশে এখনো কঠোর আইন ও রাজনৈতিক চাপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনআস্থা ক্ষুণ্ন করছে। এসব সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আইন সংস্কার, স্বচ্ছ লাইসেন্স প্রক্রিয়া, ন্যায়সংগত বেতন ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।”

এছাড়া রিপোর্টে স্ব-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সংবাদকক্ষে লিঙ্গ সমতা, আদিবাসী ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সুরক্ষা এবং গণমাধ্যম শিক্ষায় বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “গণমাধ্যমকে অবশ্যই নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার মানদণ্ডে চলতে হবে, যাতে জনগণের আস্থা আর কখনো ভঙ্গ না হয়।”

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি সোনালি দয়ারত্নে বলেন, “একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বহুমুখী গণমাধ্যমই একটি জীবন্ত গণতন্ত্রের ভিত্তি। ইউনেসকোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে এই মূল্যায়ন আমাদের সামনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কাঠামোগত সংস্কারে, গণমাধ্যম পেশাজীবীদের সহায়তায় এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাব।”

বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান আলবার্তো জিওভানেত্তি বলেন, “এই মূল্যায়ন সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষার বার্তা দেয়।”

ইউনেসকোর প্রতিনিধি সুজান ভাইজ বলেন, “প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক কাঠামোর অন্যতম স্তম্ভ। মানবাধিকার ও জীবনের মান নিশ্চিতে এর ভূমিকাকে অগ্রাহ্য করা যায় না।”

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিউচার অব স্পিচ’ প্রোগ্রামের সিনিয়র লিগ্যাল ফেলো অধ্যাপক ড. জোয়ান বারাটা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা।

মূল উপস্থাপনার পর গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণে মুক্ত আলোচনা হয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ গণমাধ্যম গঠনের জন্য সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ, মিডিয়া শিক্ষায় জোর এবং স্থানীয় মিডিয়ার সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে এবং টেকসই উন্নয়নের পথে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মত দেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা।

RELATED NEWS

Latest News