১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী, গণহত্যা বলতে বোঝায় এমন অপরাধ যা একটি জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। ইতিহাসে তিনটি ঘটনা আন্তর্জাতিক আদালতের দৃষ্টিতে গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়ায় খেমার রুজদের হাতে সংখ্যালঘু চাম ও ভিয়েতনামিদের হত্যাযজ্ঞ, ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় তুতসি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮ লাখ মানুষকে হত্যা এবং ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোরকে হত্যা।
গণহত্যার অপরাধের মধ্যে রয়েছে কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন, ধ্বংসের মতো জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি, জন্ম প্রতিরোধ বা জোরপূর্বক শিশু স্থানান্তর।
প্রসিকিউটরদের প্রমাণ করতে হয় যে ভুক্তভোগীরা একটি স্বতন্ত্র জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে আক্রান্ত হওয়া গোষ্ঠী এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। এজন্যই গণহত্যা প্রমাণ করা অন্যান্য যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তুলনায় কঠিন।
রুয়ান্ডার গণহত্যার পর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বহু কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। ১৯৯৮ সালে সাবেক মেয়র জ্যঁ পল আকায়েসুকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে প্রথমবারের মতো আদালত ১৯৪৮ সালের সনদের সংজ্ঞার ভিত্তিতে রায় দেয়।
২০১৮ সালে জাতিসংঘ-কম্বোডিয়া যৌথ ট্রাইব্যুনাল খেমার রুজ নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করে। আদালত জানায়, তাদের নীতি ছিল চাম ও ভিয়েতনামিদের লক্ষ্য করে একটি অভিন্ন সমাজ গড়ে তোলা। একইভাবে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ট্রাইব্যুনাল স্রেব্রেনিৎসা হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দোষী সাব্যস্ত করে, যাদের মধ্যে ছিলেন রাটকো ম্লাডিচ ও রাদোভান কারাদজিচ।
সর্বশেষ, জাতিসংঘের কমিশন অব ইনকোয়ারি মঙ্গলবার জানিয়েছে যে গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উসকানি দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, সহায়তা অবরোধ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং একটি উর্বরতা ক্লিনিক ধ্বংসের মতো ঘটনা গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।
ইসরায়েল এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে ‘কেলেঙ্কারিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এমন সময়ে যখন ইসরায়েল গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করার ঘোষণা দেয়।
মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষকরা আগেই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদন সেই মতামতকে আরও শক্তিশালী করেছে।