জাতিসংঘের অধীনস্থ মানবাধিকার পরিষদে এক ঐতিহাসিক ভাষণে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য, আর্থিক ও অস্ত্রচুক্তি বাতিলের আহ্বান জানালেন অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেস্কা আলবানিজ।
বৃহস্পতিবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওই অধিবেশনে আলবানিজ তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে তিনি ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনকে “আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নির্মম গণহত্যা” বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন একেবারে ধ্বংসাত্মক। ইসরায়েল একটি দখলদার রাষ্ট্র হিসেবে শুধু ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করছে না, বরং সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি দিয়ে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করছে।”
এ সময় তার আহ্বানে সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানান।
৬০টি কোম্পানির নাম উল্লেখ
‘অকুপেশনের অর্থনীতি থেকে গণহত্যার অর্থনীতি’ শিরোনামে প্রতিবেদনে ৬০টি কোম্পানির নাম তুলে ধরা হয়, যেগুলো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের দখলদার কার্যক্রমে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কোম্পানিগুলো অস্ত্র উৎপাদন, নজরদারি প্রযুক্তি, সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন এবং ফিলিস্তিনি সম্পত্তি ধ্বংসে জড়িত।
বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্কিন সামরিক প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন, ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেমস ও আইএআই, জাপানের ফানুক কর্পোরেশন, ডেনমার্কের মায়েরস্ক, এবং প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট, গুগল ও অ্যামাজন।
এছাড়া মার্কিন কোম্পানি ক্যাটারপিলার, দক্ষিণ কোরিয়ার হিউন্ডাই ও সুইডেনের ভলভোর নির্মাণ যন্ত্রপাতিও ফিলিস্তিনি বসতি ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি
আলবানিজ বলেন, “আমি শুধু একটি তালিকা দিচ্ছি না, আমি একটি সমগ্র ব্যবস্থার কথা বলছি যা ইসরায়েলের দখলদার নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে থামাতে হবে।”
তিনি সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানান যেন তারা অস্ত্রচুক্তি স্থগিত করে, বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে এবং দায়ী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।
বিশ্বজনমত গঠনের আহ্বান
আলবানিজ আরও বলেন, “এখনই সময় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে এই গণহত্যার অর্থনীতি বন্ধ করে দেয়। এটি শুধু ফিলিস্তিনের প্রশ্ন নয়, এটি মানবতা ও আন্তর্জাতিক ন্যায়ের প্রশ্ন।”
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, লক্ষাধিক মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়েছে এবং অধিকাংশ অঞ্চল বর্তমানে সেনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে করপোরেট দুনিয়ার ভূমিকা এবং গণহত্যা চালাতে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নতুন করে আন্তর্জাতিক বিবেককে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে এই বক্তব্যের পর অনেকেই আশা করছেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।