ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, দেশটির ফ্রান্স থেকে প্রাপ্ত মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের একটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফলাফল ছিল।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে ফ্রান্স তার ২৬টি মিরাজ ২০০০ জেট বিমানের মধ্যে ছয়টি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রথম তিনটি বিমান ইউক্রেনে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে rt.com।
ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম জানায়, দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয় পশ্চিম ইউক্রেনের ভোলিন অঞ্চলে, যা যুদ্ধের সম্মুখভাগ থেকে দূরে অবস্থিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পাইলট প্যারাসুট ব্যবহার করে নিরাপদে নিচে নামছেন।
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী পাইলটের প্রশংসা করে জানায়, তিনি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিমানটি জনবসতি থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে নিরাপদে অবতরণ করেছেন। বিমান বাহিনীর গণসংযোগ প্রধান ইউরি ইগনাত বলেন, “বিশ্বজুড়ে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পাইলট জীবিত ও সুস্থ আছেন।”
এর আগেও ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত একাধিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করেছে। যদিও ইউক্রেন শুরুতে দাবি করেছিল যে, পশ্চিমা বিমানগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত সুবিধা দেবে, বাস্তবে সেগুলো বেশিরভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে রাশিয়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে, কারণ ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়।
ফ্রান্সের দেওয়া মিরাজ ২০০০ বিমানগুলো মূলত পুরনো মডেল, যেগুলো ২০২৯ সালের মধ্যে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ফ্রান্স ইউক্রেনীয় পাইলটদের এসব বিমান চালানোর জন্য প্রশিক্ষণও দিয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক খরচের একটি বড় অংশই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ডেনিস শ্মিগাল জানিয়েছেন, আগামী বছরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ব্যয় অন্তত ১২০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
সোমবার জার্মানিতে আন্তর্জাতিক অস্ত্র দাতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নিয়ে শ্মিগাল জানান, ইউক্রেন অস্ত্র ক্রয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতির মুখে রয়েছে।
রাশিয়া পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করলেও এর পরিণতিতে কোনও মৌলিক পরিবর্তন আসবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে ইউক্রেনের ওপর বিদেশি সহায়তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যুদ্ধের স্থায়ীত্ব ও মানবিক বিপর্যয় নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।