Thursday, November 6, 2025
Homeআন্তর্জাতিকফিলিপাইনে টাইফুন কালমেগিতে কমপক্ষে ১৪০ জনের মৃত্যু, ১২৭ নিখোঁজ, ভিয়েতনামের দিকে ধাবিত

ফিলিপাইনে টাইফুন কালমেগিতে কমপক্ষে ১৪০ জনের মৃত্যু, ১২৭ নিখোঁজ, ভিয়েতনামের দিকে ধাবিত

সেবু প্রদেশে নজিরবিহীন বন্যা, ২৪ ঘণ্টায় ১৮.৩ সেমি বৃষ্টি, কানলাওন আগ্নেয়গিরির কাদা প্রবাহে ঘরবাড়ি চাপা, সামরিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু

টাইফুন কালমেগি কেন্দ্রীয় ফিলিপাইনে তাণ্ডব চালিয়ে কমপক্ষে ১৪০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১২৭ জন। ঝড়টি এখন ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সেবু প্রদেশজুড়ে নজিরবিহীন বন্যায় গাড়ি, নদীতীরের বস্তিবসতি এবং বড় বড় কনটেইনার পর্যন্ত ভেসে গেছে।

জাতীয় সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় ১১৪ মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে, যা সেবু প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নথিভুক্ত ২৮ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে না। এতে মোট মৃতের সংখ্যা ১৪০ এর বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেবু সিটির কাছে লিলোয়ান এলাকায় বন্যাকবলিত স্থান থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। সেখানে বন্যার তোড়ে গাড়ি একটির ওপর আরেকটি উঠে গেছে, বহু ভবনের ছাদ উপড়ে পড়েছে, স্থানীয়রা কাদামাটি সরাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

লিলোয়ানের বাসিন্দা ক্রিস্টিন অ্যাটন জানান, তার শারীরিক অক্ষমতাসম্পন্ন বোন মিশেল ঘরের ভেতর পানির তোড়ে আটকা পড়ে মারা গেছেন। তিনি বলেন, আমরা রান্নাঘরের চাকু আর ক্রোবার দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করি, দরজা নড়ল না, এরপর ফ্রিজ ভেসে উঠল। জানালা খুলে আমি আর বাবা সাঁতরে বেরিয়ে আসি। বোনকে বাঁচাতে চাইছিলাম, কিন্তু বাবার কথা ছিল, চেষ্টা করলে আমরা তিনজনই প্রাণ হারাতে পারতাম।

পাশের নেগ্রোস দ্বীপে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ লেফটেন্যান্ট স্টিফেন পোলিনার জানান, কানলাওন আগ্নেয়গিরিতে গত বছরের অগ্ন্যুৎপাতের জমে থাকা আগ্নেয় ছাই ও পদার্থ প্রবল বৃষ্টিতে ধসে নিচের গ্রামগুলোর ওপর নেমে আসে এবং ঘরবাড়ি চাপা পড়ে। জাতীয় মৃত্যুসংখ্যার মধ্যে ত্রাণ মিশনে থাকা এক সামরিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ৬ ক্রু সদস্যও অন্তর্ভুক্ত।

বুধবার সেবুর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে লোকজন রাস্তাঘাট পরিষ্কার করতে ব্যস্ত ছিলেন। মান্দাউয়ের ছোট্ট দোকানদার রেইনাল্ডো ভার্গারা বলেন, ভোর চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে পানি এত জোরে উঠছিল যে বাইরে বেরোনোই সম্ভব ছিল না। এমনটা কখনো দেখিনি, পানি ছিল প্রচণ্ড বেগে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ চারমেন ভারিলা জানান, কালমেগি স্থলে আছড়ে পড়ার আগের ২৪ ঘণ্টায় সেবু সিটি এলাকায় ১৮.৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা মাসিক গড় ১৩.১ সেন্টিমিটারের চেয়ে অনেক বেশি। সেবুর গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন এবং বিধ্বংসী বলেছেন। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানি উষ্ণ হওয়ায় টাইফুন দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে এবং উষ্ণ বায়ুমণ্ডল বেশি আর্দ্রতা ধারণ করে, ফলে ঝড়কালে বৃষ্টিপাতও বেড়ে যাচ্ছে। মোট প্রায় ৮ লাখ মানুষকে ঝড়ের পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হতে হতে কালমেগি বৃহস্পতিবার আরও শক্তি সঞ্চয় করছে। সকাল ৮টার হিসেবে স্থায়ী বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার, দমকা হাওয়া ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার রাতের দিকে মধ্য ভিয়েতনামে স্থলে আঘাত হানতে পারে, সাগরে ঢেউ ৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং শক্তিশালী জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী ত্রান হোং হা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ঝড়টিকে জরুরি ও বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছেন এবং এটিকে খুবই অস্বাভাবিক ঝড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সাধারণত বছরে ১০টি টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় ভিয়েতনামকে প্রভাবিত করে, কিন্তু ২০২৫ সালে কালমেগি হবে ১৩তম।

ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে কালমেগি এ বছরের ২০টি ঝড়ের গড় সংখ্যায় পৌঁছে দিয়েছে বলে জানান ভারিলা। তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বরের শেষে আরও তিন থেকে পাঁচটি ঝড় আসতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News