উত্তর ইরাকে এক অনুসন্ধান অভিযানের সময় মিথেন গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তুরস্কের ১২ সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে সোমবার নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে নিহত সেনার সংখ্যা ৮ বলে জানানো হয়েছিল।
তুরস্কের সামরিক বাহিনী ওই এলাকায় ২০২২ সালের মে মাসে কুর্দি যোদ্ধাদের গুলিতে নিহত এক সেনার মৃতদেহ উদ্ধারে অভিযানে নামে। সেই সময়কার অপারেশন ‘ক্লো লক’-এর আওতায় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) সদস্যদের খুঁজে বের করতে সীমান্তবর্তী গুহাগুলিতে অভিযান চালানো হচ্ছিল।
রবিবার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে বলা হয়, “একটি গুহায় অনুসন্ধান অভিযান চলাকালে ১৯ জন সেনা মিথেন গ্যাসের সংস্পর্শে আসে।”
সোমবার মন্ত্রণালয় জানায়, “মিথেন গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজন বীর সেনা মৃত্যুবরণ করেছেন, ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ জনে।” তবে গ্যাসের উৎস সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
ঘটনাস্থল সেই গুহা যেখানে আগে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল চালানো হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুর্দি গেরিলাদের ব্যবহৃত এই গুহাটি দীর্ঘদিন ধরে সামরিক টার্গেট ছিল।
এই দুঃসংবাদের মধ্যে, তুরস্ক ও কুর্দি পক্ষের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনাও গুরুত্বপূর্ণ রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘ দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠী পিকেকে সম্প্রতি অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়।
তুরস্কের সঙ্গে পিকেকে-র সংঘাত শুরু হয় ১৯৮৪ সালে, যা এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শান্তি আলোচনা শুরু হলেও ঘটনার সময়ে জেলে থাকা পিকেকে প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ ওজালানের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রো-কুর্দি ডিইএম পার্টির একটি প্রতিনিধি দল।
সেনাদের মৃত্যুর এই ঘটনাটি তাই আলোচনার সময় আরও চাপে ফেলতে পারে তুরস্ক সরকারকে। যদিও সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই মৃত্যুগুলোর প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করেনি।
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একটি শান্তিচুক্তি এগিয়ে নেওয়ার আগে অতীতের রক্তপাত ও বর্তমান সংঘর্ষের বাস্তবতা আমলে নেওয়া জরুরি। কূটনৈতিক সমঝোতা যেমন জরুরি, তেমনি মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা ও আস্থা গড়ে তোলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তুরস্ক সরকারের জন্য এই দুর্ঘটনা এক কঠিন বার্তা হতে পারে, যেখানে শান্তি উদ্যোগ আর সামরিক বাস্তবতার মধ্যবর্তী ভারসাম্য রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।