মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, এখনই পারমাণবিক চুক্তিতে আসা উচিত। অন্যথায় “আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না” বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সিএনএন-এ শুক্রবার সকালে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে “অবশ্যই সমর্থন করে” এবং ইরানে ইসরায়েলের রাতের হামলাকে “একটি অত্যন্ত সফল আক্রমণ” হিসেবে বর্ণনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একদিন আগে দেয়া বিবৃতি থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ট্রাম্প বলেন, “আমরা অবশ্যই ইসরায়েলকে সমর্থন করি। এই সমর্থন অতীতে কেউ দেয়নি।”
ট্রাম্প আরও জানান, “আমি ইরানকে ৬০ দিনের সতর্কবার্তা দিয়েছিলাম। আজ সেই সতর্কবার্তার ৬১তম দিন। এখনই তাদের চুক্তিতে আসা উচিত। নাহলে খুব দেরি হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যাদের সঙ্গে আলোচনা করতাম, তারা সবাই মৃত। কট্টরপন্থীরা।” তবে কার কথা বলছিলেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
শুক্রবার ট্রাম্পের ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলারও কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন ও এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লেখেন, ইরানকে চুক্তিতে আসার একের পর এক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইরান তা কাজে লাগাতে পারেনি।
ট্রাম্প লেখেন, “ইরানি নেতারা জানতেন না কী ঘটতে চলেছে। এখন তারা সবাই মৃত। এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এরই মধ্যে বহু মৃত্যু ও ধ্বংস হয়েছে। তবে এখনও সময় আছে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার। কারণ পরবর্তী হামলাগুলো আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
অন্যদিকে রুবিও স্পষ্ট করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, “আজ রাতে ইসরায়েল এককভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এতে জড়িত নই। আমাদের অগ্রাধিকার হলো ওই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এখনও ওমানে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফার আলোচনার আশায় রয়েছে। আলোচনার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তবে এ আলোচনার সম্ভাবনা খুব বেশি নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওমান এতদিন ধরে মার্কিন-ইরান আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে।
ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, চুক্তি নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি খুব বেশি নয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, ইরান পরমাণু চুক্তির অঙ্গীকার মানছে না। ফলে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বেড়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাত শুরু হতে পারে। আমি বলছি না তা অবিলম্বে হবে, তবে এটা খুব সম্ভব।”
এ কারণে ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ওই অঞ্চলে অনেক মানুষ রয়েছে। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে বলেছি। কিছু হলে যেন আমি দোষী না হই।”
তবে সবশেষে ট্রাম্প আবারও কূটনৈতিক সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি লেখেন, “আমরা এখনও পারমাণবিক ইস্যুর কূটনৈতিক সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই ইরানের সঙ্গে চুক্তি হোক। আমরা অনেকটাই কাছাকাছি। চুক্তির সম্ভাবনা থাকলে আমি চাই না ইসরায়েল সেখানে হামলা চালাক। এতে চুক্তির সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে।”
এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক আলোচনা কীভাবে এগোয়, এবং ইরান আদৌ চুক্তিতে আসবে কিনা।