মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার এলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্ভট’ বলে মন্তব্য করেছেন। এক সময়কার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মস্কের সঙ্গে তার বর্তমান বৈরিতা আবারও প্রকাশ্যে এসেছে।
ট্রাম্প বলেন, “তৃতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করা হাস্যকর। আমেরিকায় দুটি দলই যথেষ্ট। তৃতীয় দল কেবল বিভ্রান্তি তৈরি করে। এটা কখনোই সফল হয়নি। সে যদি মজা নিতে চায়, নিতে পারে, তবে এটি একটি বাজে সিদ্ধান্ত।”
এর আগে শনিবার টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক এলন মাস্ক ঘোষণা দেন, তিনি “আমেরিকা পার্টি” নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত “একদলীয় শাসনব্যবস্থার” বিরুদ্ধে কাজ করবে।
মস্ক দাবি করেন, প্রেসিডেন্টের বিপুল ব্যয়ের ঘাটতিপূর্ণ বিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, যেসব আইনপ্রণেতা এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের পরাজিত করতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, “যখন দেশকে দেউলিয়া করার প্রশ্ন আসে, তখন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সমান দোষী। এটাই প্রকৃত ‘একদলীয় শাসন’, কোনো গণতন্ত্র নয়।”
ট্রাম্প নিজের Truth Social প্ল্যাটফর্মে মস্ককে ‘ট্রেন দুর্ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং লেখেন, “তৃতীয় রাজনৈতিক দল কেবল বিশৃঙ্খলা ও গোলমাল সৃষ্টি করে, যা আমরা র্যাডিকাল ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকেই যথেষ্ট দেখছি।”
এই মন্তব্য ট্রাম্প তখন করেন, যখন তিনি নিউ জার্সির গলফ ক্লাব থেকে ওয়াশিংটন ফিরছিলেন এয়ার ফোর্স ওয়ানে। তার মতে, মস্কের এই পদক্ষেপ আগামী ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মস্ক যদিও বিস্তারিত কিছু জানাননি, তবে তার ঘোষণার পরই মার্কিন রাজনীতিতে আলোচনার ঝড় উঠেছে। নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন দল নিবন্ধনের কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
হোয়াইট হাউসের সাবেক “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি” বা DOGE-এর প্রধান ছিলেন মস্ক। সেই সময় তিনি সরকারি ব্যয় হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পরে তিনি পদত্যাগ করে কর্পোরেট জগতে ফিরে যান।
টেসলা ও স্পেসএক্সের পরিচালনা পর্ষদ মস্ককে রাজনীতি থেকে বিরত থেকে ব্যবসায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি এলনের কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ চাইছে তিনি ব্যবসার দায়িত্বে ফিরে যান, রাজনীতি নয়।”
২০১৯ সালে ট্রাম্প ওভাল অফিসে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে মস্ককে ‘গোল্ডেন কি’ প্রদান করেছিলেন, যা সে সময় আলোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুজনের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়, যখন মস্ক ট্রাম্পের ব্যয়বহুল বিলের সমালোচনা করেন।
এ বিষয়ে ট্রাম্প রোববার সাংবাদিকদের বলেন, মস্ককে ‘গোল্ডেন কি’ ফেরত দিতে বলবেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।
মার্কিন রাজনীতিতে তৃতীয় পক্ষের সাফল্যের ইতিহাস খুব সীমিত হলেও এলন মাস্কের মতো এক প্রভাবশালী উদ্যোক্তার এমন পদক্ষেপ আগাম নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।