আলাস্কায় অনুষ্ঠিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। শুক্রবার রাতে আঙ্করেজের একটি মার্কিন বিমানবন্দরেই তিন ঘণ্টার বেশি বন্ধ দরজার আলোচনার পর দুই নেতা বৈঠককে “উত্পাদনশীল” আখ্যায়িত করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার সংকেত দিয়েছেন।
এটি ছিল পুতিনের পশ্চিমা মাটিতে প্রথম সফর, রাশিয়ার পূর্ণবিস্তারিত ইউক্রেন আগ্রাসনের শুরু থেকে। বৈঠকটি প্রতীকী অর্থে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রেড কার্পেট স্বাগত, সামরিক ফ্লাইওভার এবং ট্রাম্পের সঙ্গে উষ্ণ হাতমিলনের মাধ্যমে সৌজন্য দেখানো হয়েছে। এটি stark contrast তৈরি করেছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের আগের শীতল সাক্ষাতের তুলনায়।
বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “ডিল তখনই হবে যখন হবে। আমরা বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি। কিছু বড় বিষয় এখনও সমাধান হয়নি, কিন্তু আমরা অগ্রগতি করেছি। সমঝোতার সম্ভাবনা খুব ভালো।” পুতিন বৈঠককে “অনেকদিন ধরে প্রয়োজনীয়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আলাস্কা সফরে পুতিন ট্রাম্পকে “Good afternoon, dear neighbour” বলে অভ্যর্থনা জানান, যা আলাস্কার রাশিয়ার সান্নিধ্যকে নির্দেশ করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় রাজধানীগুলো এটি গঠনমূলকভাবে গ্রহণ করবে।
যদিও বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, বিশ্লেষকরা মনে করেন রাশিয়ার জন্য এটি একটি কৌশলগত জয়ের সমান। আল জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউক্রেনের মিত্ররা অন্তত সাময়িক অস্ত্রবিরতি চেয়েছিলেন।
ট্রাম্প পরে ফক্স নিউজকে জানান, তিনি আশা করছেন জেলেনস্কি সমঝোতার পথে এগোবেন। তিনি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য ভূমি বিনিময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। জেলেনস্কিও সতর্কভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এবং তিন-পক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দৃঢ় অবস্থান নেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও জার্মান চ্যান্সেলর যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে রাশিয়ার ভেটো হতে পারবে না।”
আলাস্কায় বৈঠকের সময় ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছিল। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী রাতভর ৮৫টি ড্রোন ও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার উপর ছুড়ে, যার ৬১টি ধ্বংস হয়েছে। সেনারা ফ্রন্টলাইনে ১৩৯টি সংঘর্ষ রেকর্ড করেছেন।
মানবিক ক্ষতি এখনও ব্যাপক। ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতে ইউক্রেনের এক মিলিয়নের বেশি মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনকে শিশু অপহরণের অপরাধে অভিযুক্ত করেছে, যা রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করে।
বৈঠকের শেষে দুই নেতা ভবিষ্যতের বৈঠককে উন্মুক্ত রেখেছেন। ট্রাম্প বলেন, “মিলিয়নো মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব যদি আগামী বৈঠকে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা থাকে।”
আলাসকা শীর্ষ বৈঠক প্রমাণ করেছে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও যুদ্ধে বাস্তবতার মধ্যে বিরাট ফাঁক রয়েছে। বিশ্বের দৃষ্টি এখন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও শান্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প-জেলেনস্কি-পুতিন ত্রিপাক্ষিক আলোচনার দিকে।