নেটো হেগ সামিটে বুধবার এক বিজয়ী ভঙ্গিতে হাজির হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর চাপে অবশেষে ৩২টি সদস্য দেশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্যে সম্মত হয়। এর মাধ্যমে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন ট্রাম্প।
সম্মেলনের প্রধান অধিবেশন শুরুর আগে ট্রাম্প বলেন, “এটি সবার জন্য একটি বড় বিজয়। এখন আমরা সমান হব।”
সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় মিত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ট্রাম্পের নেতৃত্বে ঘোষিত এই নতুন প্রতিশ্রুতি ইউরোপে আশ্বস্ত বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় বলা হয়, “নেটোর সংহতির অঙ্গীকার একবিন্দুও দুর্বল হয়নি। এক সদস্যের ওপর হামলা পুরো জোটের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।”
পর্দার আড়ালে, ট্রাম্প জানান যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো মিত্র কেউ নেই এবং অন্যান্য দেশগুলো যেন নতুন ব্যয়ের কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কেনায় ব্যয় করে।
এদিকে, ব্যয় সংক্রান্ত এই চুক্তি কিছুটা নমনীয়ভাবে গৃহীত হয়েছে, যাতে ট্রাম্প রাজনৈতিক সাফল্য দেখাতে পারেন, আবার অর্থনৈতিকভাবে চাপে থাকা ইউরোপীয় সরকারগুলোকেও রেহাই দেওয়া যায়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে সদস্য দেশগুলো ৩.৫ শতাংশ সামরিক খাতে এবং ১.৫ শতাংশ নিরাপত্তা-সম্পর্কিত অবকাঠামোতে ব্যয় করবে।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডে ওয়েভার বলেন, “ইউরোপের ইতিহাস থেকে দীর্ঘ অবকাশ শেষ হয়েছে। এখন আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে।”
এদিকে, ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যে আবারও আলোচনায় উঠে আসে নেটোর ধারা ৫। তিনি বলেন, “এর অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, সব কিছু নির্ভর করে আপনি কীভাবে দেখেন।” যদিও ডাচ প্রধানমন্ত্রী রুটে জানান, ট্রাম্প সম্পূর্ণরূপে এই অঙ্গীকারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ঘোষণায় রাশিয়াকে ইউরো-অ্যাটলান্টিক নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে নেটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য আসেনি।
সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাম্প তাকে ‘ভদ্রলোক’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং জানান তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছেন।
অন্যদিকে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেন, “নেটোর ইউক্রেনে কোনো কাজ নেই। আমি চাই, এটা যেন এমনই থাকে।”
এই সম্মেলনের মাধ্যমে একদিকে যেমন নেটো আবারও সংহতির বার্তা দিয়েছে, অন্যদিকে ট্রাম্প নিজের রাজনৈতিক অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন।