Thursday, July 3, 2025
Homeআন্তর্জাতিকট্রাম্পের সাহায্য বন্ধে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৪ কোটি মৃত্যু হতে পারে: ল্যানসেট

ট্রাম্পের সাহায্য বন্ধে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৪ কোটি মৃত্যু হতে পারে: ল্যানসেট

ল্যানসেটের গবেষণায় সতর্কবার্তা, ইউএসএইড বন্ধ হলে ঝুঁকিতে শিশুসহ অগণিত প্রাণ

বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি অসহায় মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি সহায়তা বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে। এই সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশই শিশু বলে মঙ্গলবার এক গবেষণায় জানিয়েছে স্বীকৃত মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’।

গবেষণাটি এমন এক সময় প্রকাশিত হয়েছে, যখন স্পেনের সেভিল শহরে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা দশকের সবচেয়ে বড় সহায়তা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না।

গবেষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন সংস্থা ইউএসএইড বিশ্বের মানবিক সহায়তার প্রায় ৪০ শতাংশই বহন করত। ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার দুই সপ্তাহের মধ্যে তার উপদেষ্টা ইলন মাস্ক ইউএসএইড বন্ধ হওয়া নিয়ে ‘উডচিপারে ফেলার’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন।

অর্থনৈতিক সংকটের মতো প্রভাব

গবেষণার সহ-লেখক এবং বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ (ISGlobal)-এর গবেষক ডেভিডে রাসেলা বলেন, “অর্থায়নের এই সংকট নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের জন্য একটি মহামারি বা সশস্ত্র সংঘাতের মতো আঘাত হানবে।”

২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩৩টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইউএসএইড অর্থায়নের মাধ্যমে ৯১ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান ৮৩ শতাংশ অর্থ কাটছাঁটের হার অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মৃত্যু হতে পারে। এর মধ্যে ৫ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা ৪৫ লাখেরও বেশি।

ব্যাপক প্রভাব শিশু ও রোগ প্রতিরোধে

গবেষণায় দেখা গেছে, ইউএসএইডের সহায়তায় যেসব দেশে অর্থ গেছে, সেখানে সব ধরনের মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ কমেছে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই হ্রাস ৩২ শতাংশ।

এই অর্থায়ন বিশেষভাবে কার্যকর হয়েছে এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ প্রতিরোধে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এইচআইভি/এইডসের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে প্রায় ৫০ শতাংশ মৃত্যুহার কমেছে।

অন্যান্য দেশেরও কাটছাঁট

যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণে জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সও তাদের সহায়তা বাজেট কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন ISGlobal-এর ক্যাটেরিনা মন্তি।

সমাধান এখনো সম্ভব

তবে গবেষকেরা বলছেন, বর্তমান প্রতিশ্রুত সহায়তার ভিত্তিতে মৃত্যুর পূর্বাভাস করা হলেও যদি সহায়তা বাড়ানো হয়, তাহলে তা দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। রাসেলা বলেন, “এখন সময় সহায়তা কমানোর নয়, বরং বাড়ানোর।”

যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসএইডের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট ফেডারেল ব্যয়ের মাত্র ০.৩ শতাংশ। প্রতি নাগরিক বছরে গড়ে মাত্র ৬৪ ডলার সহায়তা দিয়েছেন।

গবেষণার আরেক সহ-লেখক, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক জেমস ম্যাকিনকো বলেন, “সাধারণ মানুষ জানলে তারা এই সামান্য ব্যয়ের মাধ্যমে কতো প্রাণ বাঁচানো যায়, নিশ্চিতভাবেই সহায়তা চালু রাখার পক্ষে মত দিতেন।”

বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে চ্যালেঞ্জ এখন সহানুভূতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

RELATED NEWS

Latest News