ফুটবলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে একদিকে চেলসির বিজয় উদযাপন, অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া—দুটিই রোববারের ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালকে ব্যতিক্রমী করে তোলে।
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ট্রাম্প ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে মাঠে প্রবেশ করতেই স্টেডিয়ামের একটি অংশ থেকে উচ্চস্বরে হাঁটুহাতি শোনা যায়। তবে মুহূর্তেই সংগীতের শব্দ বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
চেলসির জয় নিশ্চিত হওয়ার পর, ট্রাম্প নিজেই দলের অধিনায়ক রিস জেমসের হাতে ট্রফি তুলে দেন। তখন তাকে চওড়া হাসিতে খেলোয়াড়দের সঙ্গে মঞ্চে লাফাতে এবং করতালি দিতে দেখা যায়।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা দারুণ সময় কাটিয়েছি। এই দর্শকরা ছিল অসাধারণ।”
ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আগমনকালে কিছু দর্শক করতালির মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানালেও, জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন জায়ান্ট স্ক্রিনে ট্রাম্পের সালাম জানানোর দৃশ্য দেখানো হলে, আবারও বিদ্রুপের শব্দ শোনা যায়। পরক্ষণেই ক্যামেরা দৃশ্য পরিবর্তন করে।
ট্রাম্প এদিন গোল্ডেন বলসহ বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণ করেন। চ্যাম্পিয়ন চেলসির পাশাপাশি হেরে যাওয়া প্যারিস সাঁ জার্মেইন দলকেও পুরস্কৃত করা হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালের দিনটিই ছিল পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনী সভায় ট্রাম্পের ওপর হামলার একবছর পূর্তি।
চলতি বছরের ক্লাব বিশ্বকাপ এবং আগামী বছরের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপকে ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ’-এর প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছেন। আগামী বিশ্বকাপ ফাইনালও এই একই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো জানান, ট্রাম্প এই টুর্নামেন্টগুলোর গুরুত্ব তাৎক্ষণিকভাবে বুঝেছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন। ইনফান্তিনো মজার ছলে বলেন, “ট্রাম্প সম্ভবত ট্রফিটাকেও খুব ভালোবাসেন। কারণ এটি এখন ওভাল অফিসে তার ডেস্কের পাশে রাখা আছে।”
ট্রাম্পের ফুটবলপ্রেমের পেছনে পারিবারিক প্রভাবও আছে। তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে ব্যারন ফুটবলের ভক্ত। হোয়াইট হাউসে প্রথম মেয়াদে একটি গোলপোস্টও বসানো হয়েছিল।
ছাত্রজীবনে ট্রাম্প নিজেও নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে ফুটবল খেলেছেন বলে জানা যায়।
তবে ট্রাম্পের ফুটবল সংশ্লিষ্টতা রাজনীতির ছোঁয়াও পেয়েছে। জুনে হোয়াইট হাউসে ইতালির জুভেন্টাস ক্লাবকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের নিয়ে মন্তব্য করেন এবং মজার ছলে খেলোয়াড়দের জিজ্ঞেস করেন, “আপনাদের দলে কোনো নারী খেলোয়াড় হতে পারে কি?”
এমন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। অন্যদিকে, অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির কারণে ২০২৬ বিশ্বকাপে বিদেশি দর্শকদের অংশগ্রহণ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তবুও, ট্রাম্প এই ম্যাচে তার উপস্থিতিকে ‘সাফল্যপূর্ণ’ আখ্যা দেন এবং আশা প্রকাশ করেন, বিশ্বকাপ আয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায় হবে।