যুদ্ধবিরতির প্রায় চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গাজায় পৌঁছাচ্ছে অতি সামান্য ত্রাণ—হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, আর শীত ঘনিয়ে আসায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
মানবিক সংস্থাগুলো মঙ্গলবার জানায়, আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়া এই ঘনবসতিপূর্ণ উপত্যকায় এখনো প্রয়োজনীয় খাদ্যের অর্ধেকও পৌঁছায়নি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, গাজায় প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের মাত্র ৫০ শতাংশ আসছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থাগুলোর একটি জোট জানিয়েছে, মোট ত্রাণ প্রবাহ প্রত্যাশিত পরিমাণের এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ইসরায়েল দাবি করছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। তবে হামাসের নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বাস্তবে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৪৫ ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে।
জাতিসংঘ এখন আর নিয়মিতভাবে এই ট্রাক প্রবেশের তথ্য প্রকাশ করছে না।
খান ইউনুসে অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাসরত ৫২ বছর বয়সী মানাল সালেম বলেন, “ঠিকমতো তাঁবু নেই, পানি নেই, খাবার নেই, টাকাও নেই। তাঁবুটা প্রায় ছিঁড়ে গেছে—শীত এলেই ভেঙে পড়বে।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দফতর (ওচা) জানায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি যুদ্ধবিরতির পর ত্রাণ প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় শিশু অপুষ্টির হার ১৪ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে নেমেছে, তবে এক হাজারের বেশি শিশু এখনও মারাত্মকভাবে অপুষ্ট।
ওচা বলছে, দক্ষিণাঞ্চলে পরিবারগুলোর খাবার প্রাপ্তি কিছুটা বেড়েছে, এখন তারা গড়ে দিনে দুই বেলা খেতে পারছে, যেখানে জুলাইয়ে তা ছিল এক বেলা। তবে উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ।
ডব্লিউএফপি মুখপাত্র আাবির এতেফা বলেন, “এটি সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়। শীত আসছে, মানুষ এখনো ক্ষুধার্ত, প্রয়োজন সীমাহীন।”
তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির পর সংস্থাটি ২০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সরবরাহ করেছে, যা প্রয়োজনের অর্ধেক। ১৪৫টি নির্ধারিত বিতরণ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৪৪টি চালু হয়েছে।
খাদ্যের বৈচিত্র্যের অভাবও গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ পরিবার কেবল সিরিয়াল, ডাল ও শুকনো খাবারে টিকে আছে; মাংস, ডিম, শাকসবজি বা ফলের দেখা খুবই বিরল।
রান্নার গ্যাস ও জ্বালানির ঘাটতির কারণে ৬০ শতাংশের বেশি পরিবার বর্জ্য পুড়িয়ে রান্না করছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
শীত ঘনিয়ে আসায় আশ্রয়ের প্রয়োজন আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। বহু তাঁবু পুরনো ও ছেঁড়া, আর টিকে থাকা ভবনগুলোও অরক্ষিত বা ঝুঁকিপূর্ণ।
ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থার প্রধান আমজাদ আল-শাওয়া বলেন, “শীতকাল মানে বৃষ্টি, বন্যা আর রোগের আশঙ্কা। পরিস্থিতি অকল্পনীয়।”
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মুখপাত্র শায়না লো বলেন, “গাজায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন। তাঁবু ও ত্রাণ সামগ্রী এখনো ইসরায়েলি অনুমোদনের অপেক্ষায় সীমান্তে আটকে আছে।”
