থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে বড় ধরনের পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন কনজারভেটিভ নেতা ও নির্মাণ খাতের আনুতিন চানভিরাকুল। শুক্রবার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট ভোটে তিনি জয়ী হন, যার ফলে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনৈতিক আধিপত্যের অবসান ঘটল।
এএফপির গণনা অনুসারে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৪৯২ জন সাংসদের মধ্যে আনুতিন ২৪৭টিরও বেশি ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেন।
২০২৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে সিনাওয়াত্রা পরিবারের ফেউ থাই পার্টি দেশটির শীর্ষ পদে ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে আদালতের এক রায়ে প্রধানমন্ত্রী প্যাতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা পদচ্যুত হলে একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়। এই সুযোগে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হলেন আনুতিন।
ভোটের জন্য পার্লামেন্টে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের আনুতিন বলেন, “উত্তেজিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।”
এদিকে, এই ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রধান থাকসিন সিনাওয়াত্রা দেশ ছেড়ে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হন। তিনি জানান, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে এবং চিকিৎসা নিতে তিনি সেখানে যাচ্ছেন।
আনুতিন চানভিরাকুল ভুমজাইথাই পার্টির নেতৃত্ব দেন এবং এর আগে তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ২০২২ সালে গাঁজা বৈধ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান। ৫৮ বছর বয়সী এই নেতা থাইল্যান্ডের কোভিড-১৯ মোকাবিলার দায়িত্বে থাকাকালীন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন এবং পরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।
পার্লামেন্টের বৃহত্তম ব্লক ১৪৩ আসনের পিপলস পার্টির কাছ থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে, চার মাসের মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
আনুতিনের এই উত্থান সিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যারা গত দুই দশক ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি ছিল। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ফেউ থাই পার্টি চাইকাসেম নিতি সিরিকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছিল, কিন্তু তিনি আনুতিনের প্রাপ্ত ভোটের প্রায় অর্ধেক ভোট পেয়ে পিছিয়ে পড়েন।
এদিকে, ২০২৩ সালের আগস্টে নির্বাসন থেকে ফেরার পর থাকসিন সিনাওয়াত্রার হাসপাতালে থাকা নিয়ে একটি মামলার রায় আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে হওয়ার কথা রয়েছে, যা তার গত বছরের আগাম মুক্তির বৈধতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
একসময় আনুতিন সিনাওয়াত্রাদের ফেউ থাই জোটকে সমর্থন করলেও, প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সাথে সীমান্ত বিরোধে প্যাতোংতার্নের আচরণের জেরে এই গ্রীষ্মে তিনি জোট ত্যাগ করেন। গত ২৯ আগস্ট থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত নৈতিকতা লঙ্ঘনের দায়ে প্যাতোংতার্নকে বরখাস্ত করে।
ফেউ থাই বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। শুক্রবারের ভোট ঠেকানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার জন্য রাজপ্রাসাদে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই জানান, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে “বিতর্কিত আইনি সমস্যা” থাকায় রাজ কর্মকর্তারা সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।