থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতে অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে ‘নির্বিশর্ত’ এই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, যা গত পাঁচ দিন ধরে চলা তীব্র সংঘর্ষের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
উভয় পক্ষ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায়, প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে যুদ্ধরত সৈন্যদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে অস্ত্র বিরত রাখতে। বিবৃতিতে এই যুদ্ধবিরতিকে ‘দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
কাম্বোডিয়ার সামরাং শহরে এএফপির একজন প্রতিবেদক জানান, সোমবার রাত পর্যন্ত গোলাবর্ষণ চললেও যুদ্ধবিরতির ৩০ মিনিট আগে তা বন্ধ হয়। একইভাবে প্রচণ্ড সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল প্রে ভিহিয়ার প্রদেশে নিরবতা বজায় ছিল বলে জানান গভর্নর কিম রিথি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন এবং উভয় দেশের প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন এবং যুদ্ধবিরতির জন্য উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এই সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবং ঐতিহাসিক মন্দির এলাকাগুলো নিয়ে মালিকানা দাবি উল্লেখ করা হয়েছে, যা ১৯০৭ সালের ফরাসি উপনিবেশিক সীমারেখাকে কেন্দ্র করে বিরোধপূর্ণ।
যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ৪ আগস্ট ক্যাম্বোডিয়ায় সীমান্ত কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ভবিষ্যৎ শান্তি ও সমঝোতার পথ নিয়ে আলোচনা হবে।
এই চুক্তির নেপথ্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং আসিয়ান চেয়ারম্যান আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় আলোচনার ভূমিকা ছিল। চীনও আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে বলে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির শর্ত পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “এটি দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধানে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।”
মার্কিন হস্তক্ষেপের পর উভয় দেশই আলাদা আলাদা বাণিজ্য চুক্তি চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সমর্থন চেয়েছে। কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন ম্যানেট ট্রাম্পকে তাঁর ‘সরাসরি সমর্থনের’ জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। থাই প্রধানমন্ত্রীর ভারপ্রাপ্ত পদে থাকা ফুমথাম ভেচায়াচাই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বলেন, “এটি অবশ্যই উভয় পক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করবে।”
যুদ্ধবিরতির খবরে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া সাধারণ মানুষদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া ৪৫ বছর বয়সী ক্যাম্বোডিয়ান নারী ফিন নেত বলেন, “এই খবরে আমি এতটাই খুশি হয়েছি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমার ঘরবাড়ি ও জীবন ফিরে পেতে চাই।”
উল্লেখ্য, এ সংঘর্ষে থাইল্যান্ড ২৫ জন নিহতের কথা জানিয়েছে, এর মধ্যে ১১ জন সেনা ও ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে, কাম্বোডিয়া জানিয়েছে ৮ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৫ জন সেনা নিহত হয়েছেন। থাই সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা ১২ জন ক্যাম্বোডিয়ান সেনার মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন আগামী দিনগুলোতে কেমন হয়, তা নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের শান্তির পথ কতটা সুগম হবে।