Tuesday, July 8, 2025
Homeআন্তর্জাতিকটেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৮০, নিখোঁজ বহু শিশু, তীব্র সমালোচনার মুখে ট্রাম্প

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৮০, নিখোঁজ বহু শিশু, তীব্র সমালোচনার মুখে ট্রাম্প

‘১০০ বছরের দুর্যোগ’ বললেন ট্রাম্প, বন্যায় ভেসে গেছে সমার ক্যাম্প, চলছে তীব্র উদ্ধার তৎপরতা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে আকস্মিক বন্যায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও বহু শিশু ও বড়রা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কের কাউন্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৮ জন, যাদের মধ্যে ২৮ জন শিশু।

এখনো ৪১ জনের খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। তীব্র বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শুরু হওয়া এই দুর্যোগকে “১০০ বছরের দুর্যোগ” বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, “এটি বাইডেন সেটআপ, আমাদের প্রশাসনের কোনো দায় নেই।”

রবিবার টেক্সাসে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত ছিল ১৭টি হেলিকপ্টার। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা যায় গুডালুপ নদীর তীরে অবস্থিত ক্যাম্প মিস্টিকে, যেখানে প্রায় ৭৫০ জন শিশু ও কর্মী অবস্থান করছিল। রাতের ঘুমের মাঝেই প্রচণ্ড পানির স্রোতে ক্যাম্পের কেবিনগুলো তছনছ হয়ে যায়। অনেক শিশু ও কনসেলার ভেসে যায় নদীর জলে।

উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, ক্যাম্প মিস্টিকের একটি গাছের সঙ্গে আটকে পড়া অবস্থায় এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, “আমরা এখানে এসেছি শুধু পরিবারের সদস্যদের কিছুটা স্বস্তি দিতে, যাতে অন্তত প্রিয়জনের খোঁজ মেলে।”

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে টেক্সাসের মাটি সম্পূর্ণ স্যাচুরেট হয়ে গেছে এবং আরও ঝড়বৃষ্টি হলে নতুন করে ফ্ল্যাশ ফ্লাড দেখা দিতে পারে। গুডালুপ নদী মাত্র ৪৫ মিনিটে প্রায় ২৬ ফুট উঁচু হয়ে যায়, যা একটি দুইতলা বাড়ির সমান।

বন্যার সময় ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা কম্বল, খেলনা ও বিছানার সামগ্রী কাদা মাখা অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। কেবিনের জানালাগুলো পানির চাপে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এই ধরনের চরম আবহাওয়া এখন ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তীব্র খরা, অগ্নিকাণ্ড ও হঠাৎ বন্যা এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।

গভর্নর অ্যাবট জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমানে উদ্ধার কাজের পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাস্তা ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বহু সড়ক এখনও চলাচলের অনুপযোগী।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি ফেডারেল ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA) বন্ধ করার পরিকল্পনা “পরে বিবেচনা করবেন” এবং ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পুনর্বহাল করবেন না।

তবে ট্রাম্প পরবর্তীতে একটি বড় ধরনের দুর্যোগ ঘোষণা স্বাক্ষর করেন, যার ফলে টেক্সাসে FEMA এর সম্পদ কাজে লাগানো যাবে।

ঘটনার সময় অনেক সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হন। কেউ ড্রোন উড়িয়ে নিখোঁজদের খোঁজ করছেন, যদিও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছে, উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারের নিরাপত্তার জন্য সাধারণ মানুষের ড্রোন ব্যবহার বন্ধ রাখতে।

বন্যায় ভেসে যাওয়া একটি বাড়িতে ছিলেন চার তরুণী। তাদের খোঁজে পরিবারের অনুরোধে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে এসে খুঁজছেন নিখোঁজদের।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত উদ্ধারকর্মী জাস্টিন মোরালেস বলেন, “আমরা অন্তত একটা পরিবারকে closure দিতে পেরেছি। এখন শুধু প্রার্থনা, বাকিদেরও খুঁজে পাই।”

টেক্সাসে এই দুর্যোগের পেছনে শুধু প্রকৃতিই নয়, প্রশাসনিক ব্যর্থতাও দায়ী বলে মনে করছেন অনেকেই। আগাম সতর্কতা না পাওয়া ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। তবে এখন প্রধান লক্ষ্য নিখোঁজদের উদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা।

RELATED NEWS

Latest News