আগামী ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারত পালানোর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ভেতর থেকে একাধিক সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
দলটি আগেই নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি মেনে নিলেও, তারা বিস্মিত হয়েছেন কিভাবে টেলিগ্রামের বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে, অননুমোদিত গ্রুপ গড়ে উঠছে এবং কিভাবে এসব গ্রুপে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঢুকে পড়ছেন।
গত এক বছরে টেলিগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রধান সংগঠনী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার সদস্যবিশিষ্ট একাধিক গ্রুপে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা হয়। এতে সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা অংশ নিচ্ছেন।
তবে দলীয় নেতারা বলছেন, এমনকি শেখ হাসিনা যখন এসব বৈঠকে যুক্ত হন, তখনো কারা কথা বলবেন তা অর্থের বিনিময়ে নির্ধারিত হয়।
বিশেষ করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ওপর দৃষ্টি রাখছে অনেকে। তিনি টেলিগ্রামকে রাজনৈতিক ভাষণ দেওয়ার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
তবে দলীয় নেতাদের ভাষ্যমতে, তাঁর ভাষণগুলোতে স্পষ্ট কর্মপন্থা বা বাস্তব পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
দলীয় এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ওবায়দুল কাদেরকে এখন তৃণমূলের নেতারা প্রত্যাখ্যান করছেন। তিনি এখন নিজেই একাধিক টেলিগ্রাম গ্রুপ তৈরি করে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নিজের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।”
তবে এই টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে infiltration বা অনুপ্রবেশ আরও বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
দলটির দাবি, এসব গ্রুপে শুধু জামায়াত বা বিএনপির কর্মীরাই নয়, বরং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা সদস্যরাও প্রবেশ করেছেন।
তারা কথোপকথন রেকর্ড করে দলীয় কর্মীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
একজন সিনিয়র নেতা জানান, “শুরুর দিকে আমরা বিরোধী মন্তব্যগুলোকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু ধানমণ্ডি ৩২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপেও যখন ক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং আলোচনা থেকে কর্মীরা ধরা পড়তে থাকে, তখন আমরা বুঝি বিষয়টি গভীর।”
এই পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা?
News18 সূত্রে জানা গেছে, তিনি দলের নেতাদের পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন—রাস্তায় নামুন কিংবা পদত্যাগ করুন।
তিনি keyboard warriors-দের ওপর নির্ভর না করে মাটির রাজনীতির মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের VPN ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কারণ গ্রুপের তথ্য dark web-এ চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দলটি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কমিটি বিভাগীয় সংগঠক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত হবে।
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এখন নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা এখন রাস্তায় সক্রিয় হতে চায় এবং তথাকথিত ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তুলতে চায়।